দেবী মনসার উদ্ভবের ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা কর।
দেবী মনসার উৎস
মনসাদেবী সর্পের অধিষ্ঠাত্রী দেবী; লৌকিক ভয়ভীতি থেকেই তার আবির্ভাব এবং সর্পসঙ্কুল বঙ্গদেশ যে দেবীর পীঠস্থান তাতে কোন সন্দেহ নেই। কোন কোন অর্বাচীন সংস্কৃত পুরাণে মনসাকে শিবের মানসকন্যা বলা হয়েছে। বৌদ্ধ তন্ত্রে সর্পদেবী জাঙ্গুলী’র উল্লেখ আছে। সাধনমালায় দেবীকে ‘জাঙ্গলী’ বা ‘জাঙ্গুলীতারা’ বলা হয়েছে। প্রাচীন যুগে সাপের ওঝাকে বলা হত ‘জাঙ্গুলিক’। প্রাচীন পুরাণ ও মহাভারতে যে সর্প দেবীর উল্লেখ আছে, তিনি হচ্ছেন জরৎকারু, আস্তিক তাঁর ছেলে। পদ্মপুরাণ, দেবীভাগবত ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে মনসার উল্লেখ আছে। দক্ষিণ ভারতে দ্রাবিড় অধ্যুষিত অঞ্চলে মঞ্চাম্মা’ নামে সর্পদেবীর পূজা প্রচলিত আছে। অনেকের অনুমান দক্ষিণ ভারতের মঞ্চাম্মা’ শব্দ থেকে মনসা শব্দ এসেছে। আমাদের অনুমান মনসা দেবীর উৎপত্তি আর্য-অনার্য সংস্কৃতির সমন্বয়জনিত।
দেবী মনসার উদ্ভব
মঙ্গলকাব্যের বিভিন্ন দেবদেবীর উদ্ভবের পশ্চাতে রয়েছে— লৌকিক ও পৌরাণিক উপাদান। যেমন, মনসার উৎপত্তির কথা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন—
১. ঋগ্বেদে— মনা।
২. মহাযান মতে— বিষহরি, জাঙ্গুলী তারা, পূর্বভারতে জাঙ্গুলিক— বিষবিদ্যা যে জানে।
৩. প্রাচীন গ্রীসে সর্বভূষণা দেবী— মেডুসা।
৪. সাধনমালাতে— জাঙ্গুলী দেবীর পূজা প্রচলন ও মন্ত্র রয়েছে। বিপ্রদাসের কাব্যে মনসার এক নাম জাগুলি।
৫. দক্ষিণ ভারতে ওঁরাওদের দেবী মঞ্চাম্মা।
৬. ভারতে দ্রাবিড় গোষ্ঠীর মধ্যে মনসা পূজার প্রচলন বেশি।
৭. মহীশূরে ব্রাহ্মণেতর জাতির পূজিতা— মুদামা মনসার মতো মূর্তি। ময়ূরভঞ্জেও আছে।
৮. জৈনদের সর্পদেবী— পদ্মাবতী।
সুতরাং মনসা দ্রাবিড়, বৌদ্ধ, ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সংকর সৃষ্টি।
তথ্যসূত্র:
১. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস: আশুতোষ ভট্টাচার্য
৩. বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা: ভূদেব চৌধুরী
৪. বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা: গোপাল হালদার
৫. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন
Leave a Reply