রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে অন্যান্য নাট্যশালার অবদান আলোচনা কর।
অন্যান্য নাট্যশালা
এইভাবে নাট্যশালা তৈরি করে বাংলা নাটক অভিনয়ের প্রবল উৎসাহ দেখা দেয় কলকাতায় এবং তার দেখাদেখি মফঃস্বলে। এইভাবে ধনী ব্যক্তির অর্থানুকূল্যে প্রচুর নাট্যশালা নির্মাণ ও নাটক অভিনয় হতে থাকে। এই প্রসঙ্গে ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য স্মরণীয়— ‘‘স্থায়ী ফল দেখা যাক আর নাই যাক, সে যুগের বাঙালিদের মধ্যে নাট্যশালা অভিনয়ের দলগঠন করা সম্বন্ধে উৎসাহের কোন অভাব ছিল না। কলিকাতার প্রত্যেক পল্লীতেই বড়লোকের ছেলেরা সখের থিয়েটার ফাঁদিয়া বসিতেন, তাহাদের অনুকরণে মফঃস্বলবাসী সম্পন্ন ব্যক্তিরা অভিনয় সম্বন্ধে খুব উৎসাহী হইয়া উঠিয়াছিলেন। [বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস]
কলকাতার এইরকম কয়েকটি অভিনয়ের মধ্যে বলা যায়—ভবানীপুরে নীলমণি মিত্রের বাড়ি (সীতার বনবাস, ১৮৬৬), গরানহাটার জয়চন্দ্র মিত্রের বাড়ি (পদ্মাবতী, ১৮৬৭), কাঁসারিপাড়ায় কালীকৃষ্ণ প্রামাণিকের বাড়ি (শকুন্তলা), কয়লাহাটার দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জামাই হেমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি (কিছু কিছু বুঝি), বাগবাজার নাট্যসমাজে (ইন্দুপ্রভা), আড়পুলি নাট্যসমাজ, ঠনঠনিয়ায় এক ধনীর বাড়ি (এরাই আবার বড়লোক, চন্দ্রাবতী, মহাশ্বেতা)—এইসব অভিনয়ের কথা।
মফঃস্বল বলতে তখন অবিভক্ত বাংলার দুই প্রান্তেই এইরকম অনেক অভিনয় হয়েছে। ইংরেজ শাসনে কলকাতাকেন্দ্রিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশের ফলে, কলকাতার নাট্য-আয়োজনের কেন্দ্র থেকেই মফঃস্বলেও তা বৃত্তাকারে ছড়িয়ে পড়ে। চুঁচুড়া, জনাই, আগরপাড়া, হুগলি, তমলুক, গৌহাটি, ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ প্রভৃতি নানা অঞ্চলেই এই ধরনের অভিনয়ের খবর পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগই কোনো ধনী ব্যক্তির উৎসাহে কিংবা অর্থানুকূলেই এগুলি গড়ে ওঠে। তবে কোনো কোনটি সেই অঞ্চলের শিক্ষিত যুবকদের চেষ্টায় নাট্যসমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ও বেশ কিছু মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে কোনোটিই দীর্ঘস্থায়ী নয় বা কোনোটির অভিনয়ও সেকালে কোনোরকম সাড়া না ফেলে প্রায় গতানুগতিক ধারায় নাট্যাভিনয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি করেছে মাত্র।
Leave a Reply