//
//

বাংলা গদ্যের বিকাশে গোপাল হালদারের অবদান আলোচনা কর।

গোপাল হালদার

সাম্প্রতিক কালের আধুনিক যুক্তিবাদী জীবনজিজ্ঞাসা ও সমাজমনস্ক কর্মসাধনার পথিকৃৎ এবং সাম্যবাদী চেতনার অধিকারী সংস্কৃতিবান ব্যক্তিত্ব হলেন গোপাল হালদার। তিনি ছিলেন মানবতাবাদী, মুক্তবুদ্ধি, বিচিত্রকর্মা পুরুষ। মানুষের সামগ্রিক আত্মবিকাশের স্বার্থেই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামকে গোপাল হালদার প্রাথমিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, সবার উপরে মানুষ সত্য।

গোপাল হালদারের জন্ম ১৯০২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি (১৩০৮, ২৮শে মাঘ), ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বিদগাঁও গ্রামে। তিনি ছিলেন ভরদ্বাজ গোত্রের রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ। তাঁর বাবা সীতাকান্ত হালদার ছিলেন নোয়াখালি শহরের আইনজীবী। তাঁর মা বিধুমুখীদেবী ছিলেন স্নেহপরায়ণা নারী। ১৯৪৯-এ তিনি আড়িয়াদহ নিবাসী ইন্দুভূষণ সিংহের বিদুষী। কন্যা অরুণাদেবীকে বিবাহ করেন।

পিতার কর্মক্ষেত্র নোয়াখালি-তে তার স্কুল শিক্ষা, তারপর কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে ইংরেজিতে প্রথম শ্রেণির অনার্স সহ বি. এ. পাশ করেন। ১৯২৪-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম. এ. এবং বি. এল. পাশ করে কিছুদিন নোয়াখালিতে ওকালতি করেন। ১৯২৬-এ ‘প্রবাসী’ প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত ‘ওয়েলফেয়ার’ পত্রিকার সহ সম্পাদকের চাকরি নেন এবং সেইসঙ্গে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়-এর অধীনে ১৯২৮ পর্যন্ত ভাষাতত্ত্বের গবেষণায় নিয়োজিত থাকেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল— ‘‘A short sketch of Noakhali Dialect of South Eastern Bengali’’.

এরপর ১৯২৯-৩০ সালে ফেনী কলেজে অধ্যাপনা, ১৯৩০-৩২-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্ব বিভাগের রিসার্চ এ্যাসিস্ট্যান্ট, ১৯৩৮-৪০-এ ‘প্রবাসী’, ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার সম্পাদকীয় দপ্তরে কর্মগ্রহণ, ১৯৪০-৪২-এ ‘হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড’-এর সম্পাদনার কাজ করেন। স্কুল জীবন থেকেই তিনি বিপ্লবী যুগান্তর দলের কর্মী ছিলেন এবং ১৯২১-৪০ খ্রি: পর্যন্ত কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন। ১৯৩২-৩৮-এ তিনি প্রেসিডেন্সি জেল, রাজবন্দি, গৃহবন্দি অবস্থায় কাটান। এই সময়ে তিনি পড়াশোনা, গবেষণা, সাহিত্যসৃষ্টি (একদা উপন্যাস) ও মার্কসীয় মতাদর্শ চর্চায় অতিবাহিত করেন। এরপর তিনি নানা সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেন। সুভাষচন্দ্রের সহকারী হিসেবে ‘ফরওয়ার্ড’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। কৃষক সভা ও কর্মচারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফ্যাসিবিরোধী লেখক ও শিল্পীসংঘে এবং সোভিয়েত সুহৃদ সমিতিতে বুদ্ধিজীবী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদনায় (১৯৪৪-৪৮, ১৯৫২-৬৭) ‘স্বাধীনতা’ পত্রিকার সাংবাদিকতায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে, পশ্চিমবঙ্গ বিধান পরিষদে তিনি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। জীবনে বহু সম্মান ও পুরস্কারে তিনি সম্মানিত হয়েছেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য রবীন্দ্রভারতী, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করেন।

রাজনীতি, গবেষণা, জ্ঞানার্জন, সাহিত্যসাধনা সবক্ষেত্রেই স্বদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় চেতনার আত্মবিকাশের গুরুত্বকে মেনে নিয়েও সর্বজাতির স্বার্থ ও মানুষের সামগ্রিক আত্মবিকাশের সাধনার উপর গোপাল হালদার গুরুত্ব আরোপ করেছেন। সর্বাঙ্গীণ মনুষ্যত্বের সাধনায় তিনি বরাবর নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি মনে করতেন, ‘কমিউনিজম এ যুগের মানবতার নাম এবং সাম্যবাদ মানবতার উচ্চতর সাধনা।’ তিনি নিজেই জানিয়েছেন, “আমি মনুষ্যবাদী। …আর এ যুগের মনুষ্যবাদই কমিউনিজ— সৃষ্টির কর্মযোগ শাস্ত্র।’’ তাঁর কাছে মার্কসবাদ শুধুমাত্র মতবাদ নয়, তা সমাজ রূপান্তরের কর্মযোগশাস্ত্র’, তা মানবতার পলিটিক্স’।

লেখক হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯২১-এ ‘সবুজপত্র’ এবং ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় প্রবন্ধ ও গল্প লেখার সূত্রে। ১৯২১-এ ‘সবুজপত্রে’ ‘অমৃতকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায়’ ছদ্মনামে লিখিত ‘বাঙালী যুবক ও নন-কো-অপারেশন’ প্রবন্ধটি সম্ভবত তাঁর প্রথম মুদ্রিত রচনা। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় প্রকাশিত (১৩২৮, চৈত্র) ‘দুদিনের সহযাত্রী’ নামক গল্পটি প্রথম মুদ্রিত গল্প। ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায় (১৩২৭, ফাল্গুন) প্রথম সাহিত্য বিষয়ক মুদ্রিত রচনা আধুনিক সাহিত্যে সমস্যা।

তাঁর রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থগুলি হল— ‘সংস্কৃতির রূপান্তর’ (১৯৪১), ‘বাঙালী সংস্কৃতির রূপ’ (১৯৪৭), ‘একালের যুদ্ধ’ (১৯৪৭), ‘বাঙালী সংস্কৃতি প্রসঙ্গ’ (১৯৫৬), ‘বাঙলা সাহিত্য ও মানব স্বীকৃতি’ (১৯৫৬), ‘ভারতের ভাষা’ (১৯৬৭), ‘বাঙালীর আশা বাঙালীর ভাষা’ (১৯৭২), ‘সতীনাথ ভাদুড়ী ও সাহিত্য ও সাধনা’ (১৯৭৮), ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ (১৯৮৫/ লেখকের বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে নির্বাচিত রচনার সংকলন), ‘সংস্কৃতির বিশ্বরূপ’ (১৯৮৬/সংস্কৃতির রূপান্তর, বাঙালী সংস্কৃতির রূপ ও বাঙালী সংস্কৃতি প্রসঙ্গ গ্রন্থ তিনটির পরিমার্জিত একত্রিত সংস্করণ)।

এ ছাড়া রসনিবন্ধগুলি হল: ‘বাজে লেখা’ (১৯৪২), ‘স্বপ্ন ও সত্য’ (১৯৫১), ‘আড্ডা’ (১৯৫৬), ‘বনাড়ালের কড়চা’ (১৯৬০)। এছাড়া ‘বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা ১ম খণ্ড’ (১৯৫৪), ‘বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা ২য় খণ্ড’ (১৯৫৮), ‘ইংরেজী সাহিত্যের রূপরেখা’ (১৯৬১), ‘রুশ সাহিত্যের রূপরেখা’ (১৯৬৬), ‘বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ’ (১৯৮৬)। ‘রূপনারাণের কূলে’ (২ খণ্ড) (১৯৬৯, ১৯৭৮) নামক একটি আত্মজীবনীও তিনি লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস হল ‘একদা’ (১৯৩৯), ‘অন্যদিন’ (১৯৫০), আর একদিন’ (১৯৫১)।

ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে গোপাল হালদার সাহিত্য ও সংস্কৃতির মূল্যায়ন করেছেন— প্রাবন্ধিক হিসেবে এটাই তাঁর বড় কৃতিত্ব। প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি শিল্পীর সামাজিক দায়বদ্ধতাকে মেনে নিয়েছিলেন বলেই, নিছক সাহিত্য সৃষ্টির জন্য তিনি কলম ধরেননি। আবার তিনি যেভাবে সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করেছেন, তাতে সাহিত্যের ইতিহাস রচনার নতুন পদ্ধতির পরিচয় রেখেছেন। কেননা বিশেষ বিশেষ সাহিত্যিকের সাহিত্যকর্মকে তুলে ধরাই ছিল বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার পদ্ধতি। কিন্তু গোপাল হালদার সাহিত্যিকের সাহিত্যসৃষ্টির আলোচনার ক্ষেত্রে সাহিত্যিকের আর্থ-সামাজিক পটভূমি বা প্রেক্ষিতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিচ্ছিন্ন ব্যাপার হিসেবে না দেখে তিনি সমকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ইতিহাস এমনকি ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও নৃতাত্ত্বিক স্বরূপের নিরিখে মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন। প্রাবন্ধিক হিসেবে গোপাল হালদারের এই বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রশংসনীয় হয়ে রয়েছে।

তাঁর সংস্কৃতিমূলক প্রবন্ধগুলি বিশিষ্ট দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী দর্শনের মূল্যায়নের নিরিখে তাৎপর্যপূর্ণ। অনেকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির মূল্যায়নে ইতিহাসের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলিকে ছক বেঁধে সাজিয়ে দেন। এই রীতি অনেকটা কৃত্রিম। তাই ইতিহাসের রূপান্তর কেন ঘটছে, কীভাবে ঘটল, তার পিছনের অর্থনৈতিক সূত্রটি, তার দ্বন্দ্ব সংঘাত অথবা তার শ্রেণি, চরিত্র প্রভৃতি সম্বন্ধে অবহিত থেকে ইতিহাসের মূল্যায়ন জরুরি। এই মূল্যায়ন মার্কসবাদী মূল্যায়ন। সেই ব্যাখ্যা বলে, মানুষ ‘By thus acting on the external world and changing it, he at the same time changes his nature’ (ক্যাপিটাল, প্রথম খন্ড, তৃতীয় ভাগ)। প্রাবন্ধিক অবশ্য মার্কসবাদের যান্ত্রিক মূল্যায়নের বিপক্ষে এবং সেটাই তার মূল্যায়ন রীতির বিশেষত্ব।

প্রাবন্ধিক তাই সংস্কৃতির বিচার ও ব্যাখ্যায় কোনোরকম সংস্কারের বশবর্তী হননি। তিনি সংস্কৃতির মূল্যায়নে স্পষ্টতই জানিয়েছেন, “মানুষের একটা আর্থিক জীবন আছে, তাই মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনও সম্ভব হইয়াছে। সংস্কৃতির বনিয়াদ তাহার আর্থিক অবস্থার। কিন্তু কেহ যেন মনে না করি— আর্থিক অবস্থাই সংস্কৃতির একমাত্র ব্যাখ্যা। মূলতঃ তাহা প্রধান বস্তু, কিন্তু একমাত্র বস্তু নয়। বাস্তব ও আধ্যাত্মিক আরও অনেক শক্তি থাকে।” (ইতিহাসের মুখ্য রূপ/সংস্কৃতির বিশ্বরূপ)

সংস্কৃতি বলতে তিনি শুধু ‘ঘরবাড়ি, ধনদৌলত, যানবাহন’-কে বোঝাননি কিম্বা রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান’-কেও না বুঝিয়ে সংস্কৃতি বলতে মানস সম্পদ’কেও বুঝিয়েছেন। এই মানস সম্পদ হল—‘চিন্তা, কল্পনা, দর্শন, ধ্যান-ধারণা’ প্রভৃতিকে বোঝায়। তাই প্রাবন্ধিকের সিদ্ধান্ত, “আসলে বাস্তব ও মানসিক সমস্ত কৃতি’ বা সৃষ্টি লইয়াই সংস্কৃতি, মানুষের জীবন সংগ্রামের মোট প্রচেষ্টার এই নাম। তিনি সংস্কৃতি বলতে কাব্য, গান, চারুকলা প্রভৃতিকে না বুঝিয়ে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত করেছেন এভাবে, “সংস্কৃতি সমাজদেহের শুধু লাবণ্যছটা নয়, তাহার সমগ্র রূপ। তাই সমাজের পরিচয় দিয়াই সংস্কৃতির পরিচয় এইটিই আসল কথা।” (সংস্কৃতির তিন অঙ্গ’)।

‘সংস্কৃতির রূপান্তর’ প্রবন্ধ গ্রন্থটি এভাবে বিন্যস্ত ‘কথামুখ’, ‘সংস্কৃতির গোড়ার কথা’, ‘ইতিহাসের ভূমিকা’, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা: আদি রূপ’, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা: প্রাচীন ও মধ্য রূপ’, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা ও অর্ধ আধুনিক রূপ’, ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা ও আধুনিক রূপ’, ‘বিজ্ঞানের জগৎ’, ‘ভারতে বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা’ এবং ‘কথাশেষ’। ‘ভারতীয় সংস্কৃতির ধারা: অর্ধ আধুনিক রূপ’ শীর্ষক অধ্যায়ে ‘বাঙলার সংস্কৃতি ও পূর্বকথা’ নামক প্রবন্ধে বাংলার সংস্কৃতির জন্ম সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন, “‘বাঙলার কালচার’ নতুন জিনিস, ‘বাঙলার সংস্কৃতি’ কিন্তু বহুদিনের। আমাদের যে সাহিত্য, সঙ্গীত, যে নৃত্যকলা ও শিল্পকলা লইয়া আমাদের এই ঔপনিবেশিক যুগের গর্ব— এমন কি যে ভদ্রলোক’ শ্রেণী লইয়া আমাদের সামাজিক বৈশিষ্ট্য ও সামাজিক সমস্যা— তাহার জন্ম বেশিদিন হয় নাই। সে জন্মিয়াছে ইংরেজের বাঙলা জয়ের পর, সাম্রাজ্যবাদের আওতায়, প্রায় ইংরেজের তৈয়ারি কলিকাতা শহরে। কিন্তু ‘‘বাঙলার সংস্কৃতি, বাঙলার মাটি, বাঙলার জল ও বাঙলার জনজীবনের সঙ্গে জড়াইয়া গড়িয়া উঠিয়াছিল হাজার বৎসর হইতে, ভারতীয় সংস্কৃতির কোলে।

ভারতীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন অধ্যায়ের বিজ্ঞানসম্মত বস্তুবাদী বিচারের পর প্রাবন্ধিক বাংলার সংস্কৃতি ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় আদি ও মধ্য যুগে। বাংলার বাঙালী সংস্কৃতির প্রধান বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে, ‘বাংলার সংস্কৃতি ও পূর্বকথা’ প্রবন্ধে। সেই আলোচনার সারবস্তু হল—

ক) ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকায় সমাজে তেমন পরিবর্তন ঘটেনি, পরিবর্তিত হয়েছে শাসকশ্রেণীর।

খ) ভূমি ব্যবস্থায় রাজার একচেটিয়া অধিকার থাকায় সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। তবে প্রকাশ্যে বা প্রচ্ছন্ন ভাবে মানুষের মধ্যে বিরোধ বেধেছে।

গ) “এই দীর্ঘসময়ের মধ্যে শ্রেণী-বিপ্লব না ঘটিলেও শ্ৰেণী-সংঘাত ছিল, তাহার ঘাতপ্রতিঘাতে সমাজ পরিবর্তিত হইয়াছে আপােষের মধ্য দিয়া, সংস্কারের মধ্য দিয়া।”

‘বাঙালী সংস্কৃতির রূপ’ প্রবন্ধ গ্রন্থে যে অধ্যায়গুলি বিন্যস্ত হয়েছে, তা হল: ‘কথাসূত্র’, ‘সংস্কৃতির স্বরূপ’, ‘বাঙালী সংস্কৃতির রূপরেখা’, ‘বাঙালী মুসলমান ও মুসলিম কালচার’, ‘মুসলমান বাঙালীর কালচার’, ‘বাঙালী মুসলমানের কাব্যসাধনা’, ‘বাঙালী সংস্কৃতির সংকট’, ‘বাঙালী সংস্কৃতির চলতি হিসাব’ প্রভৃতি। ‘লোকসংস্কৃতি বনাম বাঙলার কালচার’ প্রবন্ধে ইংরেজ আমলে লোকসংস্কৃতির অবস্থার বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে, “(ক) তা আপন ধারায় বেড়ে উঠতে পারেনি, শুকিয়ে যাচ্ছে; (খ) বেড়ে উঠতে না পারাতে তার টেকনিক সামন্ত-যুগের রয়েছে, সেকেলে’ও স্কুল থেকে গেছে—তা নতুন বস্তু গ্রহণের মতো। নমনীয়তা বা শক্তিলাভ করছে না; (গ) আর নতুন বুর্জোয়া ব্যবসাদারী শিল্প (Commercialised art) সুযোগ পেয়ে দুভাবে তাকে শোষণ করছে—(এক) লোকসঙ্গীত প্রভৃতির টেকনিকে বিকৃত বা Pervert করে যেমন, ভাটিয়ালী গানে সিনেমার ঢং দিয়ে দিলে। (দুই) ভদ্র-সংস্কৃতির কথাও টেনিকে Vulgarise করে। যেমন, রবীন্দ্রনাথের গান ও সুরে সিনেমার রং চড়িয়ে দিলে। এই প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক ইংরেজ আমলে বাংলার লোকসংস্কৃতি যে নিপ্রাণ হয়ে পড়েছিল এবং ভদ্র সংস্কৃতির ধারা যে শিকড়হীন হয়ে উঠেছিল তার বস্তুবাদী বিশ্লেষণ করেছেন।

‘বাঙালী সংস্কৃতি প্রসঙ্গ’ প্রবন্ধ গ্রন্থের বিষয়গুলিও তাঁর সমাজমনস্কতার পরিচায়ক। যেমন, ‘সংস্কৃতির সদর্থ’, ‘ভাঙা বাঙলার সাংস্কৃতিক সংগঠন’, ‘ভাষা সমস্যার মূল সূত্র’, ‘বাঙলার ভাষা সমস্যা’, ‘লেখা ও লিপি’, ‘ভারতবর্ষে এক লিপির প্রশ্ন’, ‘রাষ্ট্রভাষা বিভ্রাট’, ‘বাঙলা সাহিত্যের পটভূমি’, ‘সাহিত্যের ভূমি সংস্কার’, ‘মুদ্রাযন্ত্রের ষড়যন্ত্র’, ‘স্বাধীনতার সাহিত্য’, ‘বাঙলা লোকসাহিত্যের সম্ভাব্যতা’ প্রভৃতি।

‘ভাষা সমস্যা ও লিপি সমস্যা’ নিয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ প্রাবন্ধিক যে সব প্রবন্ধ লিখেছেন তার প্রাসঙ্গিকতা এখনো রয়েছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো বহু ভাষা ও বহু লিপির দেশে জোর করে এক ভাষা ও এক লিপি প্রবর্তনের ঘোর বিরোধী ছিলেন তিনি। অন্নদাশংকর রায়ও ‘যে দেশে বহু ধর্ম বহু ভাষা’ প্রবন্ধে ভারতে ভাষা সমস্যার উপর যে আলোকপাত করেছেন, তার সঙ্গে গোপাল হালদারের মানসিকতার সাযুজ্য রয়েছে। প্রাবন্ধিক গোপাল হালদার এক-ভাষার প্রশ্ন প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, “রাষ্ট্র যদি গণতন্ত্র হয়, রাষ্ট্রভাষা যদি জনসাধারণের হয়, তাহলে রাষ্ট্রভাষা’ কেতাবী-ভাষা হলে চলবে না। হতে হবে সাধারণের ভাষা।’ আবার লিপির প্রশ্নেও রোমক লিপির ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

‘রাষ্ট্রভাষা বিভ্রাট’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক ইংরেজ আমলের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে আলোচনা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “হিন্দীর ও হিন্দীবাদীদের উগ্রতা ও আস্ফালন দেখে মনে করি রাষ্ট্রভাষা হিসাবে হিন্দীর পরিবর্তে ইংরেজিকেই অব্যাহত রাখা শ্রেয়ঃ!” ঠিক একই মনোভাব পোষণ করেছেন অন্নদাশংকর রায় তাঁর ‘যে দেশে বহু ধর্ম বহু ভাষা’ প্রবন্ধে। প্রাবন্ধিক অন্নদাশংকর মনে করেন, হিন্দী ভাষাকে কেউ যদি একচেটিয়া নিজের অধিকারে রাখতে সচেষ্ট হয় তবে সে চেষ্টা সারাদেশের দেওয়ালীর রােশনাইয়ের বদলে কালীপূজার তাণ্ডবে পরিণত হবে।

‘নব্য সংস্কৃতি পরিকল্পনার মূল সূত্র’ প্রবন্ধে বিশ শতকের বাঙালি সমাজের ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কি প্রয়োজনীয় তার আলোচনায় জানিয়েছেন, “এতদিন পর্যন্ত আমাদের সংস্কৃতি ছিল বহুলাংশে পরাহত জাতির জীবন-কুণ্ঠা, তার মূলনীতিটা ছিল তথাকথিত ভাববাদ বা অধ্যাত্মবাদ। আত্মকেন্দ্রিকতায় ও কল্পনা বিস্তারে— শিল্পে, সাহিত্যে আমরা অভিনব সাফল্য অর্জন করেছি। কিন্তু সুস্থ বীর্যবান্ জীবননিষ্ঠা ছাড়া কোনো সমাজ বাঁচে না, কোনো সংস্কৃতি যথার্থ বিকশিত হয় না। ইতিহাসের সেই ঘাটতি আমাদের সংস্কৃতিতে পূরণ করবার দিন আগেই এসেছে। তাই আজ আমাদের সংস্কৃতির মূল মন্ত্র হোক, জীবননিষ্ঠা অর্থাৎ বাস্তববোধ ও বাস্তব জীবনদর্শন।”

গোপাল হালদারের রসনিবন্ধগুলি মূলত ব্যক্তিগত প্রবন্ধের (Personal Essays) পর্যায়ে পড়ে। ‘বাজে লেখা’, ‘আড্ডা’ প্রভৃতি প্রবন্ধগুলি ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ ও ‘পঞ্চভূত’ প্রবন্ধ গ্রন্থের অনেকটাই উত্তরসূরী। কারণ এতে রয়েছে বৈঠকী মেজাজ, আলাপের পরিবেশ এবং বিষয় ও পারিপার্শ্বিক জীবনের সমস্যা ও অসঙ্গতি। তত্ত্ব ও তথ্যের ভার সামান্য থাকলেও প্রাবন্ধিকের সরসচিত্তের সচ্ছল পদচারণা এবং পাঠকের সঙ্গে আলাপচারিতা ও অন্তরঙ্গতা গড়ে তোলার প্রয়াস যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। ‘আড্ডা’ নিবন্ধ আল্ডারসিক বাঙালির ভোজনরসিকতা, বুদ্ধিদীপ্তশালীন কৌতুকপ্রিয়তা এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের পরিচয় মেলে। ‘বাজে লেখা’র রচনাগুলি বাংলা সাহিত্যে অপরূপ সৃষ্টি। এতে রয়েছে একটি রসিক হৃদয়ের মানসযাত্রার আলেখ্য, তাকে নব মেঘদূত বলা যেতে পারে। তবে এই বিষয়ের মধ্যে পাঠক ব্যক্তিনিরপেক্ষ সত্যকেও খুঁজে পায়। তবে সবক্ষেত্রে আলাপের অন্তরঙ্গতার অভাব কিম্বা অতিকথন দোষ রসসাহিত্যের মর্যাদাকে সামান্য হলেও ক্ষুণ্ন করেছে।

রবীন্দ্রনাথ যেমন ‘রাশিয়ার চিঠি’ প্রবন্ধ গ্রন্থে রাশিয়ার কৃষি, সমবায় প্রভৃতি বিষয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন, তেমনি গোপাল হালদারও রুশ জাতির জীবন ও মননের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ‘আধুনিক সাহিত্যে সমস্যা’ এবং ‘শিল্পী টলস্টয় প্রসঙ্গে’ প্রবন্ধ দুটিতে রাশিয়ার জমিদার ও রায়তের সম্পর্ক, আমলাতন্ত্রের সঙ্গে জনসাধারণের বিরোধ প্রভৃতি রুশ সাহিত্যে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এবং সেইরূপ কীভাবে আমাদের সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে তার আলোচনা করেছেন। এমনকি ‘রুশ সাহিত্যের রূপরেখা’ গ্রন্থে রুশ সাহিত্যের সঙ্গে শিক্ষিত বাঙালির পরিচয় সাধনের চেষ্টাও তিনি করেছেন।

গোপাল হালদারের আত্মজীবনী ‘রূপনারাণের কুলে’ গ্রন্থে তাঁর মানসবৈশিষ্ট্য তথা দেশপ্রেম, সাহিত্য সাধনা, গবেষণা, সাংবাদিকতা প্রভৃতির পরিচয় যেমন রয়েছে তেমনি এতে প্রকাশিত হয়েছে ইতিহাসনিষ্ঠ, বিশ্লেষণপরায়ণ এক নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয়। এই পরিচয় একজন যথার্থ প্রাবন্ধিকের পরিচয়কেই উপস্থাপিত করে। বিশেষ করে এই আত্মজীবনী বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক ইতিহাসের একসময়ের দলিল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

‘বাংলা সাহিত্য ও মানব স্বীকৃতি’ প্রবন্ধগ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের নানান দিকের সমালোচনায় বিন্যস্ত। বিশেষ করে এই গ্রন্থের ‘আধুনিক সাহিত্য’ প্রবন্ধটিতে সাহিত্য সমালোচনা রীতির একটি মূল্যমান তিনি উপস্থাপন করেছেন।

সাহিত্যের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন তাত্ত্বিকগণ ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ পোষণ করেছেন। তাই যুগে যুগে সাহিত্য মূল্যায়নের মাপকাঠিও গেছে বদলে। মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী গোপাল হালদার তাই সাহিত্য মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মার্কসীয় রীতি পদ্ধতিকে সাহিত্য মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁর ‘আধুনিক সাহিত্য’ প্রবন্ধটিতে মার্কসীয় আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে। যুক্তিবাদী জীবন জিজ্ঞাসার ও সমাজ মনস্কতার অন্যতম পথিকৃৎ গোপাল হালদার সাহিত্যকে যে বস্তুবাদী দৃষ্টিতে সামাজিক চেতনায় দেখতে চান তারই প্রকাশ রয়েছে আলোচ্য আধুনিক সাহিত্য প্রবন্ধটিতে। বলাবাহুল্য, প্রবন্ধটিতে প্রাবন্ধিকের সাহিত্য সমালোচনার সৃজনশীলতা প্রকাশিত হয়েছে।

সমালোচক গোপাল হালদার আধুনিক সাহিত্যের প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে গিয়ে নিজেই প্রবন্ধটিকে কয়েকটি পর্যায়ে বিন্যস্ত করেছেন। পর্যায়গুলি হ’ল— (এক) আধুনিক সাহিত্য বিচারের মানদণ্ড; (দুই) আলোচনার দৃষ্টিক্ষেত্র; (তিন) জন্মচিহ্ন বা যুগধর্ম; (চার) বিষয়বস্তু ও রূপ বা ‘কন্টেন্ট’ ও ‘ফর্ম’; (পাঁচ) পরিবর্তিত মূল্যবোধ; (ছয়) মানুষের মূল্য; (সাত) ব্যক্তিত্বের মূল্য; (আট) বিপ্লবী নিয়তির স্বীকৃতি; (নয়) মানবতাবাদ-(ক) প্রাচীন মানবতাবোধ; (খ) সহজ মানুষ ও মানবতাবাদ; (গ) গ্রীক মানবতাবাদ; (দশ) আধুনিক বাংলা সাহিত্য। সমালোচক গোপাল হালদার প্রবন্ধের শুরুতে আধুনিক সাহিত্য কী এবং সাহিত্যের বিচার পদ্ধতি বা কেমন এই নিয়ে আলোচনা করেছেন।

গোপাল হালদার বলেছেন— ‘এক এক সমাজে, এক এক শ্রেণীতে সাহিত্য বিচারের এক এক রূপ। এমন কি যারা মোটামুটি একই দৃষ্টিক্ষেত্র থেকে সাহিত্য আলোচনা করেন, এই জীবনদর্শন যাঁদের জীবনের অবলম্বন, অনেক সময় দেখি, তারাও সাহিত্যক্ষেত্রে এক মাপকাঠিতে বিচার করতে পারছেন না। শুধু কি তাই, সব সাহিত্যের উপযোগিতা সব সময় সমান নয়, তার কারণ মানুষের মূল্যবোধও পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই সাহিত্যের স্বরূপ নির্ণয়ে বা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বিচার পদ্ধতি নেই। তাই প্রাবন্ধিক সাহিত্য বিচারে ‘আপেক্ষিক মূল্য নির্ধারণে’ পক্ষপাতী।

যথার্থ সাহিত্য চিরকালের হলেও কালের বিচারে সাহিত্য প্রাচীন ও আধুনিক হতে পারে। এজন্য মধ্য যুগের সাহিত্যের সঙ্গে আধুনিক যুগের পার্থক্য বুঝতে পারি স্ব-স্ব যুগ লক্ষণের জন্য। কেননা ভারতচন্দ্র ও নজরুলের মধ্যে তো পার্থক্য রয়েছে, সেই পার্থক্য— তা মধ্য ও আধুনিক যুগের বৈসাদৃশ্যবশত। যেমন, সংস্কৃত মহাভারতে ও কাশীদাসী মহাভারতে কর্ণ ও কুন্তীর সাক্ষাৎকার-এর বিষয় রয়েছে আর সেই একই বিষয় নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’ লিখেছেন কিন্তু একটা মধ্যযুগের এবং অন্যটি আধুনিক যুগের যুগ-লক্ষণে চিহ্নিত। এই পার্থক্য মূলত দেশকালজনিত, সমকালীন পারিপার্শ্বিকতাবশত। তাই সমালোচক গোপাল হালদার বলেছেন— “প্রত্যেক লেখাতেও এসব কম বেশি থাকে। যাকে আমরা বলি কবির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য তারও দুটি দিক আছে—একদিকে তা কাল থেকে কবির সংগ্রহ, আর একদিকে তা কালকে কবির যোগানো।” সত্যিই তো, সাহিত্যিক তার সমকালীন জীবনের প্রেক্ষাপটকে যেমন সাহিত্যে রূপ দেন তেমনি তিনি তাঁর সাহিত্যের দ্বারা ভাবী কালকে প্রসারিত করে যান। তাই আমরা ভারতচন্দ্র, ঈশ্বর গুপ্তকে যুগসন্ধির কবি বলে থাকি।

বিষয়বস্তুর পার্থক্য না থাকা সত্ত্বেও যুগের বদল হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে সাহিত্যেরও বদল হচ্ছে। বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে একে বলা হয় কন্টেন্ট ও ফর্মের পার্থক্য। কর্ণ ও কুন্তীর সাক্ষাৎকার মহাভারতে ও রবীন্দ্রনাথে আছে কিন্তু তার রূপ গেছে বদলে। আধুনিক জীবনের দ্বন্দ্ব নাটকীয়ভাবে ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদে’র মধ্যে। তাই একে বলা যেতে পারে old wine in new bottle-এর মতো।

এই বিষয়বস্তু বা কন্টেন্ট এবং রূপ বা ফর্ম— এ দুয়ে মিলে অখণ্ড সাহিত্য সৃষ্টি। দেহ ও মন এই দুয়ের অবিনা সম্বন্ধ ব্যতিরেকে যেমন অখণ্ড মানুষ হতে পারে না তেমনি বিষয়বস্তু এবং তার প্রকাশকলার সমন্বয় ছাড়া অখণ্ড সৃষ্টিকর্ম হতে পারে না। এই আলোচনার প্রেক্ষিতে সমালোচক বিষয়বস্তুকে দুভাগে ভাগ করেছেন— (ক) কথাবস্তু, (খ) ভাববস্তু। যেমন, তাজমহলের কথাবস্তু তো তাজমহল ও সাজাহান কিন্তু ভাববস্তু হল তাজমহল ও সাজাহানকে ছাড়িয়ে চিরকালের বাণীর রূপ। রবীন্দ্রনাথ তাই সেই ভাববস্তুর দিকে লক্ষ্য রেখে উচ্চারণ করেছেন— “তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ/তাই তব জীবনের রথ/পশ্চাতে ফেলিয়া যায় কীর্তিরে তোমার/বারম্বার।’’ আবার শকুন্তলার বিষয়বস্তু কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্‌’ নাটকে আছে কিন্তু উভয়ের ভাববস্তুতে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আসলে এই ভাববস্তু হল আইডিয়ার দিক, বাণীর দিক, message-এর। দিক। এই ভাববস্তু যখন নবসৃষ্টি হয়ে রূপ লাভ করে তখন তা সত্য হয়ে ওঠে। আর এই সত্যতা নির্ভর করে বিষয়বস্তুর প্রকাশে ও রূপায়ণে।

‘কন্টেন্ট’ ও ‘ফর্ম’ এবং বিষয়বস্তু ও রূপ’-এর বদল হয় কাল থেকে কালে। এই বদলের কারণ পরিবর্তিত মূল্যবোধ। মূল্যবোধের পরিবর্তনের ফলে মানুষের মূল্য, ব্যক্তিত্বের মূল্য পরিবর্তিত হয় বলেই বিষয়বস্তু ও রূপরীতির পরিবর্তন।

প্রকাশ পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ঘটলেও ভাববস্তু যে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়েছে এমন বলা যাবে না, তবে কিছু পরিবর্তন তো ঘটেছেই। প্রাচীনকালে দেশে দুর্ভিক্ষ হওয়ার জন্য অকালে প্রজামৃত্যুর জন্য প্রজানুরঞ্জক রামচন্দ্র শূদ্র শম্বুককে দায়ী করেছিলেন এবং শম্বুকের শিরচ্ছেদ হয়েছিল। কিন্তু আজকের সাহিত্যে এই ভাববস্তু নেই, কারণ মানুষের মর্যাদা আজ অনেক বেড়ে গিয়েছে। প্রাচীনকালের মানুষ, সাম্প্রতিক অতীতের মানুষ রাম কর্তৃক শম্বুকের শিরচ্ছেদে রাজার সুবিচার লক্ষ্য করেছে; কিন্তু আধুনিক মানুষ এই ঘটনাকে বা ডাইনি সন্দেহে পিটিয়ে মারাকে আদৌ সমর্থন করে না। কারণ মানুষের মর্যাদা আজ সর্বজনস্বীকৃত।

‘সবার উপর মানুষ শ্রেষ্ঠ’ হওয়ার জন্য মানুষের মূল্য পরিবর্তিত হওয়ায় ব্যক্তি মানুষের ব্যক্তিত্বের মর্যাদাও বেড়েছে। এই ব্যক্তিত্ববোধ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ আধুনিক যুগে ব্যাপক ও গভীর হচ্ছে, তা পরস্পর পরস্পরকে স্বাতন্ত্রে তথা ব্যক্তিত্বে চিহ্নিত করতে পারছে। রামায়ণের দৃষ্টান্তে দেখা যায়, রামচন্দ্রের পিতা যেখানে একাধিক বিবাহ করেছিলেন সেখানে চন্দ্র একটি মাত্র বিবাহ করেছিলেন, এমনকি পত্নীকে বনবাস দিতে হলেও স্বর্ণসীতা ভাল করে অশ্বমেধ যজ্ঞ করেছিলেন কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করেননি। দশরথের থেকে রামচন্দ্রের এই পত্নীপ্রেম তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে চিহ্নিত করে। আবার সেই রামচন্দ্র যিনি সতীপ্রেমে একনিষ্ঠতার পরিচয় দিয়েও প্রজানুরঞ্জনের আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে স্ত্রীকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন— রামচন্দ্রের এই কাজ তার মনুষ্যত্বের পরিচায়ক নয়। কেননা ব্যক্তিপ্রেম, সীতার প্রেম এসব কি রাজার রাজত্ব ও রাজকর্তব্যের কাছে তুচ্ছ? রামচন্দ্রের প্রজানুরঞ্জনে আজ আর আধুনিক মানুষের কোন আস্থা নাই, কেননা ব্যক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠাই, ব্যক্তিত্বের গৌরবই আজকের সমাজে বড়। আধুনিক যুক্তিবাদী মানুষ এ শিক্ষা দিয়েছে যে ব্যক্তির মর্যাদা, ব্যক্তিস্বরূপের দাবীই আত্যন্তিক সত্য, ব্যক্তির আত্মবিলোপ চরম সত্য নয়। পুরাতন সাহিত্যের তুলনায় আজ আমাদের আধুনিক সাহিত্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র ও ব্যক্তিগত প্রেম ভালোবাসার মূল্য অনেক বেশি।

সমালোচক গোপাল হালদার মনে করেছেন ব্যক্তিত্বের মূল্য ও মর্যাদা বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক সাহিত্যে এই মূল্যবোধ দানা বাঁধতে পারেনি। তবে সেই সব নতুন মূল্যবোধ সাহিত্যে রূপ পেতে শুরু করেছে।

প্রকৃতির নিয়মকে বুঝে মানুষ নিজেই নিজের ভাগ্যের স্রষ্টা হচ্ছে। এই মূল্যবোধকে সমালোচক গোপাল হালদার বলেছেন ‘বিপ্লবী নিয়তি’ বলে— যা মানুষের আধুনিকতম আবিষ্কার। মানুষ বুঝতে শিখেছে সে সৃষ্টির অধিকারী, নতুন নতুন আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে সে সৃষ্টির দুয়ার চিরকাল খুলে দিচ্ছে। এই যে মানুষের অফুরান উদ্ভাবনী শক্তিতে প্রত্যয়, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়ার সম্ভাব্যতায় বিশ্বাস এবং মানুষের বিপ্লবী ভূমিকায় গুরুত্ব আরোপ নিজের সম্বন্ধে মানুষের এই মূল্যবোধ আধুনিক সাহিত্যে রূপ লাভ করেছে।

মানুষের চিন্তা চেতনায় নতুন নতুন চিন্তাভাবনা যখন রূপ পায় তখনই পরিবর্তিত হয় মূল্যবোধ। আর এই নতুন মূল্যবোধ থেকে জন্ম নেয় নতুন সাহিত্য। সমালোচক আধুনিক মানুষের তিনটি প্রধান দিকের মূল্যবোধের পরিবর্তনের কথা বলেছেন— (ক) মানুষের মর্যাদাবোধ, (খ) ব্যক্তিসত্তার মুক্তি, (গ) মানুষের বিপ্লবী নিয়তিতে বিশ্বাস। এছাড়া এই পরিবর্তন লক্ষ করা যায় নতুন সমাজসত্তা বা নতুন সঙঘচেতনা (Social ego)-তে বিশ্বাস, বিশ্বমানবতাবাদ (Internationalism) এবং নতুন জাতীয় আত্মা’-বাদ (National self) ইত্যাদি।

মানবতার বিকাশের সাথে সাথে সাহিত্যের যে বিকাশ সাধিত হচ্ছে সেই আলোচনার পর আধুনিক বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার প্রকাশ কতখানি সেই আলোচনায় ব্রতী হয়েছেন সমালোচক গোপাল হালদার। মানবতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যের বিকাশ। সব দেশে তার বিকাশ সমভাবে হয়নি, তার কারণ সব দেশে সমানতালে সমভাবে ইতিহাস বিকাশ লাভ করেনি।

আধুনিক সাহিত্যের আলোচনায় সমালোচক গোপাল হালদার আধুনিক সাহিত্য কী বা তার বৈশিষ্ট্য, কেমন করে তা ঐতিহাসিক বিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছে, সেইসব তাত্ত্বিক আলোচনা মার্জিত ও সুললিত ভাষায়, উদাহরণ চয়ন করে, যুক্তি পরম্পরার সাহায্যে গাণিতিক নিয়মের মতো করে স্পষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী রূপ দিয়েছেন। এই ধরনের সমালোচনা রীতি যেমন অভিনব তেমনি তার প্রভাবও সুদূরপ্রসারী।

প্রাবন্ধিক গোপাল হালদারের কৃতিত্ব

এক. বস্তুবাদী বিশ্লেষক

প্রাবন্ধিক গোপাল হালদারের প্রবন্ধসাহিত্যে প্রধান অবদান হল— তিনি বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বস্তুবাদী বিশ্লেষণ করেছেন। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে মার্কসীয় রীতি পদ্ধতি অনুসরণ করে তিনি নিপুণ শিল্পীর মতো বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করেছেন।

দুই. সাহিত্য বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি

এতদিন সাহিত্যিকদের সাহিত্যের খতিয়ান তুলে ধরে সাহিত্যিকদের সাহিত্যের বিশ্লেষণ করা হত। গোপাল হালদার সাহিত্য বিশ্লেষণে আর্থ-সামাজিক পটভূমিকে গুরুত্ব দিয়ে সেই প্রেক্ষিতে সাহিত্য বিশ্লেষণে প্রয়াসী হলেন। এই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকদের নতুন প্রেরণা সঞ্চার করল।

তিন. তথ্য ও তত্ত্বের সমন্বয়

প্রবন্ধের প্রকৃষ্ট বন্ধনকে দৃঢ় করতে হলে যে তথ্য ও তত্ত্বের সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন তা উপলব্ধি করেছিলেন বলেই গোপাল হালদারের প্রবন্ধগুলির বক্তব্য যেমন বলিষ্ঠ তেমনি তার রসাস্বাদনও হয়েছে হৃদয়গ্রাহী। যেমন, ‘বাঙালী কালচারের ভাবী ভিত্তি’ প্রবন্ধে বাঙালিদের ভাষা সংস্কৃতি কী হওয়া উচিত তার বিশ্লেষণে জানিয়েছেন, ‘‘বাঙালী সংস্কৃতির আসল কাঠামো (Form) হওয়া চাই বাঙালী। হিন্দু-মুসলমানের সেই যৌথ সংস্কৃতি; বাঙালী হিন্দু-মুসলমান জনগণের সমসূত্রে গাঁথা লোক-জীবন লোক হওয়া চাই তার ভিত্তি; আধুনিককালের জাগ্রত জীবন হবে তার উপকরণ (Content), আর এই নতুন বাঙালী সংস্কৃতির প্রাণ হবে শুধু বুর্জোয়া মানবতাবাদ নয়— আধুনিক বিপ্লবী মানবতাবাদের নতুন প্রেরণা ও সত্য।” তথ্য ও তত্ত্বের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রাবন্ধিকের এই সিদ্ধান্ত এখনও সমান প্রাসঙ্গিক।

চার. নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি

প্রাবন্ধিকের নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে তা সব শ্রেণির পাঠকের কাছে হৃদয়গ্রাহী হয়। বলাবাহুল্য, গোপাল হালদারের সেই নির্মোহ নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ছিল বলেই তাঁর প্রবন্ধগুলি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। যেমন, ‘তাবেদারী প্রেম’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “সংবাদপত্রের সম্মান ও প্রভাবও যে দিনে দিনে কিভাবে এই মালিকপক্ষের অন্তর্ঘাতী নীতিতে নিঃশেষিত হচ্ছে তার প্রমাণ পাওয়া গেল— পশ্চিম বাঙলার ১৯৫৬ সনে বিহার-বঙ্গ সংস্কৃতি প্রস্তাবের আন্দোলনের কালে। দেখা গেল সংবাদপত্র নিতান্তই আজ সরকারের রক্ষিত’ প্রচারপত্র মাত্র। …সংবাদপত্রের সাধুতায়, মতামতের উদ্দেশ্যে লোকের শ্রদ্ধা তাই আজ প্রায় শেষ হতে চলেছে। কারণ, সংবাদপত্র শুধু মালিক পত্র হয়নি, মুদ্রাযন্ত্র হয়ে উঠেছে জন-জীবনের যন্ত্রণাস্বরূপ।”

পাঁচ. তুলনামূলক আলোচনা পদ্ধতি

প্রবন্ধের বিষয়বস্তুকে যদি তুলনামূলক ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে সেই বক্তব্য জীবন্ত হয়ে ওঠে, যা গোপাল হালদারের প্রবন্ধের মধ্যে সহজলভ্য। যেমন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম’, ‘বাঙলার সাংস্কৃতিক সাযুজ্য’ প্রবন্ধে মাতৃভাষা বাংলা সম্বন্ধে তুলনামূলক আলোচনা সূত্রে লিখেছেন, “বাঙলা পৃথিবীর ছ-কোটি বাঙালীর মাতৃভাষা— শুধু পশ্চিম বাঙ্গলার দুই কোটির নয়, বা পূর্ব-পাকিস্তানের চার কোটির নয়। বাঙালী শাসকগোষ্ঠী যতটা আত্মবিস্মৃত হোক, দিল্লী বা করাচীর যতটাই মুখাপেক্ষী। হোক রাজনীতির প্রসাদজীবীরা, বাঙালী বুদ্ধিজীবী ও বাঙালী সাহিত্যিক যেন বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করেন।”

ছয়. যুক্তিধর্মিতা

গোপাল হালদারের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর যুক্তিবোধের পথকে প্রশস্ত করেছে। এই যুক্তিধর্মিতার জন্য প্রবন্ধের বিষয় ও উপস্থাপন প্রাঞ্জল হয়ে উঠেছে। যেমন, ‘কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রবন্ধে সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিকের সম্পর্ক নিয়ে। যুক্তিপূর্ণ মন্তব্য করে লিখেছেন, “সংবাদপত্রের মালিক ও সাংবাদিকদের জমিদার ও বণিক চলের স্বার্থসম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। আর সেই সম্পর্কের একটা বড় মিলনকেন্দ্র কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তাই, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্নালিজমের শিক্ষার এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সংবাদপত্রের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে, আবার বুদ্ধিজীবী মহলের মুখ বন্ধেরও আয়োজন করছেন এভাবে সংবাদপত্রের মালিকেরা।”

সাত. গদ্যরীতি

গোপাল হালদার প্রাবন্ধিক হিসেবে যে কৃতিত্বের পরিচয় রেখেছেন, তার উৎসে রয়েছে সহজ, সরল, যুক্তিপূর্ণ উদাহরণ সমন্বিত ভাষার ব্যবহার। এই ভাষা বিশ্লেষণের পথকেও প্রশস্ত করেছে।

ক) বক্তব্য বিষয়কে উপস্থাপনের জন্য নেতি নেতি করে ইতির দিকে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। যেমন, বাঙলার সংস্কৃতি ও পূর্বকথা’ প্রবন্ধে মধ্যযুগের বাঙালী সংস্কৃতির পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন, “অবশ্য মধ্যযুগের বাঙালী সংস্কৃতির প্রধান পরিচয় এই সব শাস্ত্রে নয়,–নব্যন্যায়েও নয়, বৈষ্ণবশাস্ত্রেও নয়, সেই পরিচয় বৈষ্ণব আন্দোলনে, বিশেষ করিয়া বাঙলায় রচিত বৈষ্ণব সাহিত্যে, পদাবলীতে, জীবনীগ্রন্থে এবং বাঙালী হিন্দু সমাজকে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের গোস্বামীদের নতুন করিয়া সংগঠনে।”

খ) প্রবন্ধের বিষয়কে সরস করে পরিবেশন করার কথা তিনি ভেবেছিলেন বলেই সরস মন্তব্যের ব্যবহার করেছেন।
‘ঔপনিবেশিক সংস্কৃতির যুগ: বাঙলার কালচার’ প্রবন্ধে বাংলার কালচার বোঝাতে গিয়ে লিখেছেন, “ঔপনিবেশিক ভারতীয় জীবনের হিসাবেই বাঙলার কালচার একবার বুঝিয়া দেখিবার মতো—সন্দেশ রসগোল্লা হইতে একেবারে কলিকাতার চায়ের দোকানের ‘ডবল ডিমের মামলেট’ পর্যন্ত সব কিছুই এই কালচারের পরিচয় দিত, এখনো দেয়।”

সুতরাং বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং বাঙালির জীবন সম্পর্কে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বস্তুবাদী বিশ্লেষণে যুক্তিপরম্পরায় সাজিয়ে গুরু বিষয়কে সহজ ও প্রাঞ্জল রূপে পরিবেশনের মাধ্যমে এবং বিশেষ এক গদ্যশৈলীর ব্যবহারে গোপাল হালদার আধুনিক কালের প্রাবন্ধিক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!