//
//

ট্র্যাজেডি ও মহাকাব্যের সম্পর্ক আলোচনা কর।

ট্র্যাজেডি ও মহাকাব্যের সম্পর্ক

অ্যারিস্টটল তাঁর ‘পোয়েটিকস’ গ্রন্থের ২৩ থেকে ২৬-তম অধ্যায়ে মহাকাব্য সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন এবং মহাকাব্যের যে বৈশিষ্ট্যগুলি তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতীয়মান হয়েছে তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। মহাকাব্যের মূল বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল–

স্বয়ংসম্পূর্ণ কাহিনি: মহাকাব্যে একটি সম্পূর্ণ আখ্যান থাকে, যার আদি, মধ্য এবং অন্ত আছে। তবে, এই আখ্যানের মূল উদ্দেশ্য হলো *Unity of Action* বা কর্মের ঐক্য বজায় রাখা।
গুরুগম্ভীর ঘটনা: মহাকাব্যের ঘটনাবলি গুরুগম্ভীর এবং মহত্ত্বপূর্ণ হতে হবে।
নায়কের চরিত্র: মহাকাব্যের নায়ক সৎ, উচ্চবংশজাত, বীর এবং ধীরোদাত্ত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন, যদিও তাঁকে অতি ধার্মিক হতে হবে এমন নয়।
মহাকাব্যের বিশালতা: মহাকাব্যের আকার বৃহৎ এবং এর কাহিনি ব্যাপক পরিসরের।
বর্ণনাত্মক ভাষা: মহাকাব্য সাধারণত বর্ণনাত্মক ধারায় রচিত হয়।
কালসীমার অসীমতা: মহাকাব্যে নির্দিষ্ট কালসীমা নেই, ফলে এতে বহু উপন্যাসিক ঘটনা সহজেই স্থান পেতে পারে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলির বেশিরভাগই ট্র্যাজেডির সাথেও মিলে যায়। তবে যখন অ্যারিস্টটল মহাকাব্যের সঙ্গে ট্র্যাজেডির তুলনামূলক আলোচনা করেছেন, তিনি ট্র্যাজেডিকেই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যরূপ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এর কারণগুলির মধ্যে রয়েছে–

১. ষড়ঙ্গ শিল্প: অ্যারিস্টটল ট্র্যাজেডিকে ষড়ঙ্গ শিল্প বলে অভিহিত করেছেন, যেখানে ষড়টি প্রধান উপাদান— Plot (কাহিনি), Character (চরিত্র), Thought (চিন্তা), Diction (ভাষাশৈলী), Spectacle (দৃশ্য), এবং Melody (সুর) সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে, মহাকাব্য চতুরঙ্গ শিল্প, যেখানে মূলত কাহিনি, চরিত্র, চিন্তা এবং ভাষাশৈলী থাকে, কিন্তু Spectacle এবং Melody উপস্থিত থাকে না।

২. ছন্দের বৈচিত্র্য: ট্র্যাজেডিতে ছন্দের বৈচিত্র্য রয়েছে, যা মহাকাব্যে অনুপস্থিত। মহাকাব্যের প্রতিটি সর্গ (Book বা Canto) নির্দিষ্ট ছন্দে রচিত হতে হয়। যদিও কবি যদি ইচ্ছা করেন তবে তিনি অন্য সর্গে ছন্দ পরিবর্তন করতে পারেন, তবে এটি সাধারণত ট্র্যাজেডিতে ছন্দের চেয়ে কম বৈচিত্র্যপূর্ণ।

৩. কাহিনির ঐক্য: মহাকাব্য দীর্ঘ আকারের হওয়ায়, অনেক সময় তার কাহিনি ঐক্য শিথিল হয়ে পড়ে, যা ট্র্যাজেডিতে ঘটে না। ট্র্যাজেডির কাহিনি আরও সংক্ষিপ্ত এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।

এই সমস্ত কারণেই অ্যারিস্টটল উপসংহার টানেন যে ট্র্যাজেডি মহাকাব্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ শিল্পরূপ। তাঁর মতে, “Tragedy is better than Epic,” কারণ ট্র্যাজেডি তার কাহিনি বিন্যাস এবং শিল্পীয় গুণাবলীর দিক থেকে বেশি দক্ষতাসম্পন্ন এবং সরলভাবে উপস্থাপিত হয়।

তথ্যসূত্র:

কাব্যজিজ্ঞাসা – অতুলচন্দ্র গুপ্তDownload
কাব্যতত্ত্ব: আরিস্টটল – শিশিরকুমার দাসDownload
কাব্যমীমাংসা – প্রবাসজীবন চৌধুরীDownload
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – নরেন বিশ্বাসDownload
ভারতীয় কাব্যতত্ত্ব – অবন্তীকুমার সান্যালDownload
কাব্যজিজ্ঞাসার রূপরেখা – করুণাসিন্ধু দাসDownload
কাব্য-শ্রী – সুধীরকুমার দাশগুপ্তDownload
কাব্যালোক – সুধীরকুমার দাশগুপ্তDownload
কাব্যপ্রকাশ – সুরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তDownload
নন্দনতত্ত্ব – সুধীর কুমার নন্দীDownload
প্রাচীন নাট্যপ্রসঙ্গ – অবন্তীকুমা সান্যালDownload
পাশ্চাত্য সাহিত্যতত্ত্ব ও সাহিত্যভাবনা – নবেন্দু সেনDownload
সাহিত্য প্রকরণ – হীরেণ চট্টোপাধ্যায়Download
সাহিত্য জিজ্ঞাসা: বস্তুবাদী বিচার – অজয়কুমার ঘোষDownload

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!