মনসামঙ্গল কাব্য রচনায় তন্ত্রবিভূতির কৃতিত্ব আলোচনা কর।
তন্ত্রবিভূতি
সপ্তদশ শতকের শেষভাগে উত্তরবঙ্গের মনসামঙ্গলের এক কবি হলেন তন্ত্রবিভূতি। অধ্যাপক আশুতোষ দাস উত্তরবঙ্গের মালদহ থেকে এই পুঁথির সন্ধান পান। অধ্যাপক দাস এই লেখকের দুটি পুঁথির সন্ধান পান। একটির লিপিকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগ, আর একখানি সম্ভবত পুঁথির প্রতিলিপি। সুকুমার সেনের মতে জগজ্জীবন ঘোষাল তাঁর পূর্ববর্তী কবি তন্ত্রবিভূতির কোন কোন অংশ গ্রহণ করেছে। সম্পাদক অধ্যাপক দাসও মনে করেন—জগজ্জীবন তাঁর পূর্বসূরী তন্ত্রবিভূতির কাছে ঋণী।
সুকুমার সেন অনুমান করেছেন— “মনে হয় কবি জাতিতে তাঁতি ছিলেন, তাই ভণিতায় নিজেকে ‘তন্ত্রবিভূতি’ বলিয়াছেন” (বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস-প্রথম খণ্ড পূর্বার্ধ-১৯৭৮, পৃষ্ঠা-২৪১), তন্ত্রবিভূতি তাঁর কাব্যের সর্বত্র পুরা ভণিতা ব্যবহার করেছেন—
মন দিঞা সভে মনসার গীত।
তন্ত্রবিভূতি গায় মনসাচরিত।।
সমালোচক অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তন্ত্রবিভূতির কবিত্বশক্তির প্রশংসা করে লিখেছেন— “উত্তরবঙ্গের মনসামঙ্গলে যে নূতনত্ব পরিলক্ষিত হয়, তাহার প্রথম সূচনা করেন তন্ত্রবিভূতি। এইজন্য সপ্তদশ শতাব্দীর মনসামঙ্গল কাব্যের বিবর্তন ইতিহাসে তন্ত্রবিভূতির কাব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।” (বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, তৃতীয় খণ্ড, প্রথম পর্ব–১৯৮০, পৃষ্ঠা-১১১)।
সমালোচকের বক্তব্যের সারবত্তা দু-একটি উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে। যেমন, সনকার ক্রন্দন—
সুনিঞা চান্দোর কথা কান্দে সোনা হানে মাথা
ভূমে পরে অঙ্গ আছরিঞা।
কিংবা, সর্পদংশনে লখিন্দরের মৃত্যুতে সনকাকে চাঁদের প্রবোধ দান—
মোর ভাগ্যে মৈল পুত্র বালা লখিন্দর।
কানির সঙ্গে গেল মোর বাদ বাদান্তর।।
১. বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস: আশুতোষ ভট্টাচার্য
২. বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত: অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
৩. বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস: সুকুমার সেন
Leave a Reply