//
//

রবীন্দ্রানুসারী কবি হিসেবে যতীন্দ্রমোহন বাগচীর কৃতিত্ব আলোচনা কর।

যতীন্দ্রমোহন বাগচী

রবীন্দ্রপ্রভাবকে বরণ করে নিয়ে কবি স্বভাবের প্রকাশে যিনি ব্রতী হয়েছিলেন তিনি হলেন যতীন্দ্রমোহন বাগচী (১৮৭৮-১৯৪৮)। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাব্য আলোচনা প্রসঙ্গে লিখেছেন— “তাহার বিষয় সাধারণ গার্হস্থ্য জীবনের স্নেহ-মমতা-ভালবাসা প্রভৃতি সুকোমল বৃত্তিসমূহকেই অবলম্বন করিয়াছে। কিন্তু তাঁহার প্রকাশরীতির ঋজুতা ও ভাবসন্নিবেশের সুসঙ্গতি ও স্বাভাবিকতা তাঁহার কাব্যের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ।” (বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা)।

তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলি হল— ‘লেখা’ (১৯০৬), ‘রেখা’ (১৯১০), ‘অপরাজিতা’ (১৯১৩), ‘বন্ধুর দান’ (১৯১৮), ‘নাগকেশর’ (১৯১৯), ‘মহাভারতী’ (১৯৩৬) ইত্যাদি।

যতীন্দ্রমোহন গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের শস্য-শ্যামল মহনীয় রূপ ও অতি সাধারণ সুখ-দুঃখের চিত্র যেমন আন্তরিকতায় ও সহৃদয়তায় অসাধারণ পর্যায়ে উন্নীত করেছেন তেমনই নিসর্গ চিত্রণে ও রোমান্টিক প্রেমের বন্দনাতেও তিনি দক্ষতা দেখিয়েছেন। আর এখানেই তাঁর যথেষ্ট প্রতিভার পরিচয়। যতীন্দ্রমোহন রবীন্দ্রানুসারী হলেও তাঁর কাব্যে যে অন্তরঙ্গ সহৃদয় সুরটি অভ্রান্তরূপে ধ্বনিত হয়েছে—তা-ই তাঁকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছে। পরাধীন ভারতবর্ষে সাধারণ মানুষকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে তিনি কর্মের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে কবিতা রচনা করেছেন। তিনি মনে করতেন কর্মের মধ্যেই দাসত্বের মুক্তি। কর্মই একমাত্র পথ—যা জীবনকে স্বনির্ভর এবং স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে। তাই তিনি ‘কর্ম’ কবিতায় লিখেছেন—

বিশ্ব যুড়ি’ সৃষ্টি মোদের হস্ত মোদের বিশ্বময়,

কাণ্ড মোদের সর্বঘটে—কোনখানে তা দৃশ্য নয়?

বিশ্বনাথের যজ্ঞশালে কর্মযোগের অন্ত নাই,

কর্ম সে যে ধর্ম মোদের,—কর্ম চাহি—‘কর্ম চাই’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!