লিপিবিজ্ঞান সম্পর্কে আলোচনা কর।
লিপিবিজ্ঞান (Graphics)
কথ্যভাষার দুটি সীমা আছে— স্থানগত সীমা (limitation of space) এবং কালগত সীমা (limitation of time)। কারণ, যে-স্থানে আমরা কথা বলি, অন্য কিছুর সাহায্য না নিলে, সেই স্থানেই আমাদের কথা সীমাবদ্ধ; আমাদের গলার জোর স্থানের সীমাকে অতিক্রম করে খুব বেশি দূর যেতে পারে না। তেমনি আমরা যে-সময়ে কথা বলি, আমাদের কথা শুধু সেই সময়ের মানুষ সোজাসুজি শুনতে পারে, অন্য সময়ের মানুষ তা পারে না। আমাদের কথ্য ভাষার এই দ্বিবিধ সীমাকে জয় করার জন্যে মানুষ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ধাপে ধাপে ভাষাকে লিখে রাখার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এই লিপি-পদ্ধতির সাহায্যে এক কালের ও এক স্থানের মানুষের মুখের ভাষা অন্য স্থানের ও অন্য কালের মানুষ সোজাসুজি কানে শুনতে পারে না বটে, কিন্তু পাঠ করে জানতে পারে। এই লিপি-পদ্ধতির ক্রমিক বিবর্তনের তত্ত্ব, বিভিন্ন ভাষার লিপি-পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ও ক্রমোন্নতির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হল লিপিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়। প্রাচীন লিপির পাঠোদ্ধারে প্রিন্সেপ (1Prinsep), ব্যুলার (Buhler)— প্রমুখ মনীষীরা বিশেষ অবদান রেখেছেন। ডেভিড ডিরিঙ্গার (David Diringer) পৃথিবীর একজন বিখ্যাত লিপিবিজ্ঞানী। তাঁর ‘Alphabet’ গ্রন্থে তিনি পৃথিবীর প্রায় সব ভাষার লিপির বিবর্তনকাহিনি রচনা করে অমরত্ব লাভ করেছেন।
লিপির উদ্ভব ও স্তরভেদ: বাংলা লিপির উৎস ও ক্রমবিকাশ
মুখের ভাষার এই যে স্থায়ী ও দৃশ্য রূপায়ণ লিপি, যাকে মনীষীরা মনে করেন মানব সভ্যতার একটি অনন্য সম্পদ, সেই লিপির কিন্তু বর্তমান রূপটি একদিনে কোনো পরিকল্পিত প্রয়াসে সৃষ্ট হয়নি। মানুষের চিন্তার সম্পদ এবং তার মনের ভাব যাতে স্থান-কালের সীমা জয় করে স্থায়ী রূপ পায় তার জন্যে মানুষ কখনো পরিকল্পিত ভাবে, কখনো অপরিকল্পিতভাবে নানা উপায় আবিষ্কার করে আসছে এবং তারই মিলিত ফলশ্রুতি-স্বরূপ ধাপে ধাপে অল্পে-অল্পে লিপির বর্তমান রূপটি গড়ে উঠেছে নানা স্তরের মাধ্যমে। আদিম কাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত লিপির এই যে ক্রমবিকাশ তাতে মোটামুটিভাবে চারটি স্তর দেখতে পাই। এই স্তরগুলি হল— চিত্রলিপি ও গ্রন্থলিপি, ভাবলিপি, চিত্রপ্রতীক লিপি ও ধ্বনিলিপি।
চিত্রলিপি (Pictogram) ও গ্রন্থিলিপি (Quipu)
আনুমানিক ২০০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তীকালে মানুষের সভ্যতা-সংস্কৃতির যখন বিশেষ বিকাশ ঘটেনি তখনো মানুষ তার জীবনের বীরত্ব-কাহিনিকে ও তার চোখে দেখা ও মনে দাগ-কাটা জিনিসগুলির ছবি এঁকে মনের স্মৃতিকে বাইরে প্রকাশ করত। বিশেষজ্ঞদের মতে আদি কালের মানুষের এই অনুন্নত শিল্পচর্চা ছিল মূলত তার ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অঙ্গ। ক্রমে মানুষ তার এই চিত্র-বিদ্যাকে কাজে লাগাল স্মৃতিকে শাশ্বত করে রাখার মাধ্যম রূপে। দেওয়ালে, পর্বতগাত্রে, গাছের গুঁড়িতে দাগ কেটে, রেখাচিত্র বা ছবির মাধ্যমে মানুষ তার জন্তু শিকারের ঘটনা বা বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর রূপ এঁকে রাখত। এই অনুন্নত স্মারকচিত্র-পদ্ধতি এখনো আমেরিকার রেড ইণ্ডিয়ানদের মধ্যে এবং অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত আছে। এগুলি ঘটনা বা বস্তুকে অপেক্ষাকৃত স্থায়ী রূপ দিয়েছে বলে এগুলিকে চিত্রলিপি বলা হয়, কিন্তু এগুলিকে ঠিক ভাষার লিখিত রূপ বা প্রকৃত লিপির প্রথম পদক্ষেপ বলা যায় না। কারণ এগুলি ছিল ঘটনা বা বস্তুর বা প্রাণীরই দৃশ্য রূপায়ণ, কিন্তু আসল লিপি হল মানুষের মুখের ভাষার অর্থাৎ ধ্বনির দৃশ্য রূপায়ণ।
চিত্রলিপির অনুরূপ পদ্ধতি ছিল দড়িতে গিট বেঁধে তার সাহায্যে ঘটনা মনে করে রাখার পদ্ধতি। এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল দক্ষিণ আমেরিকার পেরু অঞ্চলের ইস্কাদের মধ্যে। এই পদ্ধতির নাম কুইপু (Quipu) বা গ্রন্থিলিপি। আদিম রীতির এই উত্তরাধিকার এখনো দেখতে পাই যখন বিশেষ ঘটনা মনে করার জন্যে মেয়েরা কাপড়ের আঁচলে গিঁট বেঁধে রাখে বা পুরুষেরা রুমালে গিঁট বেঁধে নেয়।
ভাবলিপি (Ideogram)
চিত্রলিপির শেষ পর্বে চিত্রাঙ্কন অপেক্ষাকৃত সরলীকৃত হয়ে এসেছিল। তখন কোনো জিনিসের পুরো ছবি না এঁকে কয়েকটি রেখার সাহায্যে সংক্ষেপে জিনিসটি বুঝিয়ে দেওয়া হত। এর পরের ধাপে রেখাচিত্র ক্রমে বস্তুকে না বুঝিয়ে বিশেষ ভাবকে বোঝাবার জন্যে ব্যবহৃত হত। যেমন ডেভিড ডিরিঙ্গার একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন—একটি ছোট গোল বৃত্ত চিত্রলিপির যুগে সূর্যকে বোঝাতো, ভাবলিপির যুগে সেই বৃত্তটি সূর্যকে না বুঝিয়ে উত্তাপকে বা আলোকে বা আলোর দেবতাকে বোঝাতে লাগল। তেমনি একটি চোখ থেকে ফেঁটা-ফেঁটা জল পড়ার ছবি চিত্রলিপির স্তরে শুধু চোখ ও অশ্রুবিন্দুকে বোঝাত, কিন্তু ভাবলিপির যুগে সেটা দুঃখকে বোঝাতে লাগল। এইভাবে লিপিপদ্ধতি স্থল থেকে সূক্ষ্মর দিকে এগিয়ে ক্রমশ প্রতীকধর্মী হয়ে উঠল। এই ভাবলিপি কালিফোর্নিয়াতে পাওয়া যায়। উত্তর আমেরিকার ও অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী ও আফ্রিকার কোনো-কোনো নিগ্রো সম্প্রদায়ে এই লিপি পদ্ধতি প্রচলিত।
চিত্রপ্রতীকলিপি (Hieroglyph)
চিত্রলিপি (Pictogram) ও ভাবলিপির (icleogram) স্তরে অঙ্কিত ছবিগুলি যথাক্রমে উপস্থাপ্য বস্তু ও ভাবের প্রতীক ছিল। পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ চিত্রপ্রতীকলিপির (Hieroglyph) স্তরে অঙ্কিত চিত্রগুলি উপস্থাপ্য বস্তু বা ভাবের প্রতীক না হয়ে সেই উপস্থাপ্য বস্তু বা ভাবের নামবাচক শব্দ বা ধ্বনিসমষ্টির প্রতীক হয়ে উঠল। যেমন— এক রকমের চিত্রপ্রতীক লিপিতে মাথার ছবি আঁকা হত, এই ছবিটি ‘tp’ ধ্বনির প্রতীক ছিল, এই ধ্বনিটিতে ‘মাথা’কে বোঝাতো। তেমনি, একটি লোক তার মুখের কাছে হাত এনে বসে আছে— এ ছবিটি ‘wnm’ শব্দটির প্রতীক ছিল। আর এই শব্দের অর্থ ছিল ‘খাওয়া’। এখানে সোজাসুজি বস্তু বা ভাবকে না বুঝিয়ে বিশেষ বিশেষ ধ্বনিগুচ্ছকে বোঝাচ্ছে আর এই সব ধ্বনিগুচ্ছ ঐসব বস্তুকে বা ভাবকে বোঝাচ্ছে। এসব উদাহরণে অবশ্য দেখা যাচ্ছে যে, ধ্বনিগুচ্ছ যেসব বস্তুকে বা ভাবকে বোঝাচ্ছে অঙ্কিত ছবিগুলি সেইসব বস্তু বা ক্রিয়ার ছবি। কিন্তু ক্রমে এমন হল যে, ছবির সঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক দূরবর্তী হয়ে এল। শেষ ধাপে ছবি এমন ধ্বনিগুচ্ছকে বোঝতো যে ধ্বনিগুচ্ছ সেই অঙ্কিত ছবির বস্তু বা ক্রিয়ার নাম নয়, অন্য কোনো জিনিসের নাম। যেমন—একটি বাজপাখির ছবি ‘nsw’ ধ্বনির প্রতীক ছিল এবং এই ‘nsw’ ধ্বনিগুচ্ছ বলতে বাজপাখিকে বোঝাতো না, রাজা’কে বোঝাতো। এমনি করে ছবিগুলি যখন পুরোপুরি ধ্বনির প্রতীক হয়ে উঠল তখনকার লিপিকে চিত্রলিপি বা ভাবলিপি না বলে শব্দলিপি (Logogram) বলা হয়। এইভাবে চিত্রপ্রতীক লিপি ক্রমশ ধ্বনিলিপিতে (Phonogram) উত্তীর্ণ হল। এই জন্যে চিত্রপ্রতীক লিপিকে সন্ধিলগ্নের লিপি (transitional script) বলা হয়। মিশরের চিত্রপ্রতীকলিপি এই শ্রেণীর লিপির শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।
ধ্বনিলিপি (Phonogram)
চিত্রপ্রতীকগুলি যখন বস্তু বা ক্রিয়ার প্রতীক হয়ে ধ্বনিগুচ্ছের প্রতীক হয়ে উঠল তখন লিপি হয়ে উঠল ধ্বনিলিপি (Phonogram/ Phonetic Script)। ধ্বনিলিপির প্রথম স্তরের লিপিতে ব্যবহৃত প্রতীকগুলি একটি ধ্বনি (sound) বা অক্ষরের (syllable) প্রতীক ছিল, এক-একটি প্রতীক একাধিক ধ্বনির সমবায়ে গঠিত গোটা শব্দেরই (word) প্রতীক ছিল। এই পূর্ববর্তী স্তরের নাম শব্দলিপি (logogram) ক্রমে সরলীকরণের ফলে লিপিতে ব্যবহৃত রেখাচিত্রগুলি ক্রমশ ছোট ও সরল হয়ে এলো এবং এক-একটি রেখাচিত্র এক-একটি গোটা শব্দের প্রতীক না হয়ে শুধু শব্দের আদি অক্ষরের (syllable) প্রতীক হয়ে উঠল। এই সরলীকরণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় শীর্ষনির্দেশ (Acrology)। এই প্রক্রিয়ার ফলে চতুর্থ স্তরে যে লিপি-পদ্ধতির জন্ম হল তাকে বলে অক্ষর-লিপি বা দললিপি (Syllabic Script)। অক্ষর হল নিঃশ্বাসের এক ধাক্কায় উচ্চারিত ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ। অক্ষরলিপিতে এক-একটি রেখাচিত্র এক-একটি অক্ষরের (syllable) প্রতীক হয়ে উঠল। যেমন—ক = ক্ + অ। এর পরে ক্রমে ক্রমে ধ্বনিলিপি বিকাশের শেষ ধাপে লিপি আরো বিশ্লেষণধর্মী হয়ে গেল এবং লিপিতে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি রেখাচিহ্ন এক-একটি অক্ষরের (syllable) প্রতীক না হয়ে এক-একটি একক ধ্বনির প্রতীক হয়ে উঠল। যেমন—রোমীয় লিপির a, b, c, d ইত্যাদি। একক ধ্বনির এক-একটি লিখিত রূপের নাম বর্ণ (Letter)। কোনো ভাষার বর্ণের সমষ্টিকে বর্ণমালা (Alphabet) বলে। লিপি-পদ্ধতির বিকাশের এই শেষ ধাপের নাম বর্ণলিপি (Alphabetic Script)। এই ধরনের লিপির নিদর্শন হল রোমীয় লিপি (Roman Script)। বাংলা লিপি অংশত অক্ষর লিপি (যেমন ক = ক্ + অ, খ = খ্ + অ), অংশত ধ্বনিলিপি বা বর্ণলিপি (যেমন—অ, আ)।
লিপির শ্রেণী বা প্রকারভেদ
চিত্রলিপি ও গ্রন্থিলিপিতে লিপির প্রাক্রূপের সূচনা হয়েছিল, ভাবলিপি, শব্দলিপি, অক্ষরলিপি ও বর্ণলিপির মাধ্যমে ধাপে ধাপে আধুনিক লিপির জন্ম হল এবং পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষার জন্যে নানা ধরনের লিপির বিকাশ হল। পৃথিবীতে যে সব লিপি প্রচলিত ছিল ও আছে সেগুলিকে এই কয়েকটি মূল শ্রেণীতে ভাগ করা যায়— (ক) সুমেরীয় বাণমুখ লিপি বা কীলকাকার লিপি (Sumerian Cuneiform Script) (খ) চীনীয় চিত্রলিপি (Chinese Pictographic Script) (গ) মিশরীয় চিত্রপ্রতীক লিপি (Egyptian Hieroglyphic Script) এবং (ঘ) সম্ভাব্য ভারতীয় লিপি (Hypothetical Indian Script)। এগুলি ছাড়া কতকগুলি লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি বলে সেগুলির শ্রেণীনির্ণয় করা যায়নি। এগুলিকে অপঠিত (undeciphered) বা অশ্রেণীবদ্ধ (unclassified) লিপি বলা যায়। যেমন—ভারতের সিন্ধুসভ্যতার ধ্বংসাবশেষে প্রাপ্ত সিন্ধুলিপি (Indus Script), ইউরোপের প্রাচীন দেশ ক্রীটে প্রাপ্ত ক্রীট বা মীনোয়ান লিপি (Cretan/Minoan Script), প্রাচীন আমেরিকার আদিবাসীদের মায়া লিপি (Maya Script) ও আজটেক্ লিপি (Aztec Script) ইত্যাদি।
সুমেরীয় বাণমুখ লিপি
কোনো কোনো ভাষাতত্ত্ববিদ সুমেরীয় লিপি ও বাণমুখ লিপিকে দুটি পৃথক্ ধারা রূপে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আসলে এ দুটি পৃথক ধারা নয়, একই ধারা। সুমেরীয় হল জাতির নাম, বাণমুখ হল তাদের লিপি-পদ্ধতির নাম। লিপিবিশেষজ্ঞ ডেভিড ডিরিঙ্গার বলেছেন যীশুখ্রিস্টের জন্মের বহু বছর আগে সুমেরীয়দের একটি শাখা মেসোপটেমিয়ায় প্রবেশ করে। তারাই কাঁচা মাটির টালির উপরে কীলক বা বাটালি বসিয়ে যে লিপি লিখত তারই নাম Cuneiforin লিপি ; লাতিন ভাষায় Cuneus মানে কীলক বা বাটালি (wedge) আর forma মানে আকৃতি। এই জন্যে বাণমুখ (arrow-heatled) নামটিও এখন সুপ্রযুক্ত মনে হয় না। জার্মানদের দেওয়া Keilschrift-এর অনুসরণে এর নাম দেওয়া যায় কীলক লিপি। এই লিপি প্রথমে চিত্রলিপি হলেও পরে ভাবলিপি ও ধ্বনিলিপিতে পরিণত হয়। সুমেরীয়, আসীরীয় ও ব্যাবীলনীয়রা এই লিপি ব্যবহার করত এবং শেষে পারস্য দেশে আর্যদের প্রাচীন পারসিক ভাষা লেখার জন্যেও এই লিপি ব্যবহৃত হয়। এই লিপি এখন বিলুপ্ত, এর কোনো উত্তরাধিকার নেই।
চীনীয় লিপি
মূলত চিত্রলিপি থেকে চীনীয় লিপির জন্ম। চীনে প্রচলিত লৌকিক ঐতিহ্য থেকে জানা যায় মরমিয়া সাধনায় ব্যবহৃত আটটি প্রতীক চিত্র (pa kua) থেকে সেখানে চিত্রলিপি বিকাশ লাভ করে। অবশ্য চিত্রলিপি থেকে জন্ম হলেও চীনা লিপি এখন ভাবলিপিতে উত্তীর্ণ হয়েছে, কিন্তু এই লিপি এখনো অক্ষরলিপি বা বর্ণলিপির স্তরে এসে পৌঁছায়নি। চীনালিপি কবে সূচিত হয়েছিল তা জানা যায় না, তবে খ্রিঃ পূঃ দ্বিতীয় সহস্রাব্দেও এই লিপি ছিল এমন অনুমান করা হয়। এই লিপি চীনা ভাষা ছাড়াও এখন ঈষৎ পরিবর্তিত আকারে জাপানি ভাষাতেও ব্যবহৃত হয়।
মিশরীয় চিত্রপ্রতীক লিপি
একদা মিশরে প্রচলিত এই লিপির উৎস নিশ্চিতরূপে জানা যায় নি, কিন্তু খ্রিঃ পূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দে এই লিপি প্রচলিত ছিল বলে অনুমান করা হয়। গ্রীকেরা প্রাচীন মিশরে পুরোহিতদের মধ্যে যে লিপি-পদ্ধতি প্রচলিত দেখে, পরবর্তীকালে তাকেই তারা hieroglyphika grammata (খোদিত পবিত্র বর্ণ) (hierjs = পবিত্র, gly phein = খোদাই করা, gramma = বর্ণ, অক্ষর) নামে অভিহিত করে। তা-ই থেকে প্রাচীন মিশরীয় লিপির নাম হয় hieroglyph বা পবিত্র লিপি। অবশ্য পুরোহিতরা ছাড়া অন্যান্যরাও ব্যাপক ক্ষেত্রে এই লিপি ব্যবহার করত। এই লিপিতে রেখাচিত্রগুলি শব্দের প্রতীক বা অক্ষরের প্রতীক রূপে ব্যবহার করা হত বলে একে বাংলায় চিত্রপ্রতীক লিপি বলা যায়। মিশরের প্রাচীন চিত্রপ্রতীক লিপি জটিল ছিল এবং তাতে প্রতীকের সংখ্যাও খুব বেশি ছিল—পাঁচ শ’য়ের কাছাকাছি। ক্রমে এই লিপি-পদ্ধতি ব্যাপকতর ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্যে সরলীকৃত হয় এবং দ্রুত লিখনের জন্যে এতে টানা হাতের লেখার রীতি (cursive system) গড়ে উঠে। মিশরের চিত্রপ্রতীক লিপির সরলীকৃত টানা লেখার নাম hieratic। এবং তা থেকে আরো সংক্ষেপিত লিপি-পদ্ধতির সৃষ্টি হয় যার নাম demotic। ১৭৯৯ খ্রীস্টাব্দে নেপোলিয়নের সৈন্যরা মিশরে যে রোসেটা প্রস্তর-লিপি (Rosetta Stone) আবিষ্কার করে তাতে hieroglyphic, demotic ও Greek লিপি পাওয়া যায় এবং তার সাহায্যে মিশরীয় লিপির পাঠোদ্ধার অনেকটা সহজসাধ্য হয়েছে।
সেমীয়-হামীয় (Semitic-Hamitic) ভাষাবংশের একটি শাখা হল সেমীয় শাখা। এই শাখার দুটি উপশাখা—পূর্ব ও পশ্চিমা। পূর্বী শাখার ভাষা আসীরীয় (Assyrian), আক্কাদীয় (Akkadian) এবং ব্যাবীলনীয় (Babylonian) বাণমুখ লিপিতে লেখা হত, একথা আগে বলা হয়েছে। পশ্চিমা উপশাখার দুটি গোষ্ঠী-দক্ষিণী ও উত্তরা। উত্তরা গোষ্ঠীর মধ্যে পড়ে কাননীয় (Canaanite), ফিনীসীয় (Phenician) এবং আরামীয় (Airamaie) ভাষা। পশ্চিমা সেমীয় উপশাখার উত্তরা গোষ্ঠীর ফিলীসীয় ও আরামীয়রা মিশরীয়দের কাছ থেকে লিপিবিদ্যা গ্রহণ করে এবং তারাই মিশরীয় চিত্রপ্রতীকে (Hieroglyph) ব্যবহৃত অক্ষরলিপি (Syllabic Script) থেকে ক্রমে বর্ণলিপি (Alphabetic Script) সৃষ্টি করে। সিরিয়া (Syria) ও প্যালেস্টাইন্ (Palestine) অঞ্চলে খ্রীস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে এই বর্ণলিপির প্রচলন হয়। তাদের আবিষ্কৃত বর্ণমালা থেকে পৃথিবীর অধিকাংশ আধুনিক বর্ণমালার জন্ম। পশ্চিমা সেমীয় উপশাখার উত্তরা গোষ্ঠীর আবিষ্কৃত এই বর্ণমালার দুটি প্রধান ধারা—আরামীয় ও ফিনীসীয়। ফিনীসীয় ধারা থেকে গ্রীকেরা আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে তাদের বর্ণলিপি গ্রহণ করে তার অনেক পরিবর্তন করে এবং গ্রীক বর্ণমালা গড়ে তোলে। এই গ্রীক বর্ণমালা থেকে ক্রমবিবর্তনের ফলে লাতিন ভাষায় ব্যবহৃত রোমীয় লিপির (Roman Alphabet) বিকাশ হয়। এই রোমীয় বর্ণমালা আধুনিক ইউরোপের প্রধান ভাষা ইংরেজি, জার্মান, ফরাসি, ইতালীয়, স্পেনীয় প্রভৃতিতে গৃহীত হয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমা সেমীয় উপশাখার উত্তরা গোষ্ঠীর আরামীয় ধারা থেকে প্রাচীন ভারতের দু’টি মূল লিপিমালা—ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠীর জন্ম। এই ব্রাহ্মী থেকে আধুনিক ভারতের বাংলা, হিন্দি প্রভৃতি ভাষার লিপির জন্ম।
সম্ভাব্য ভারতীয় লিপি: বাংলা লিপির উৎস ও ইতিহাস
প্রাচীন ভারতের আদি লিপিমালা দুটি—ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। এদের থেকে পরবর্তীকালের সমস্ত ভারতীয় লিপির জন্ম। এদের মধ্যে খরোষ্ঠীর উৎস নিঃসন্দেহে বহির্ভারতীয়—সেমীয়। কিন্তু ব্রাহ্মী লিপির উৎস সম্পর্কে নানা মত প্রচলিত আছে। কেউ কেউ মনে করেন ভারতবর্ষেই ব্রাহ্মী লিপির জন্ম হয়েছিল। এডওয়ার্ড টমাসের (Edward Thomas) মতে ব্রাহ্মী লিপি ভারতের প্রাক্ আর্য জাতি দ্রাবিড়দের আবিষ্কার। সুধাংশু কুমার রায়ের সিদ্ধান্ত হল—সিন্ধুলিপি (Indus Script) থেকে ব্রাহ্মী লিপির জন্ম। কিন্তু সিন্ধুলিপির সম্পূর্ণ পাঠোদ্ধার এখনো সম্ভব হয়নি। সুতরাং এই মত এখনো নিঃসংশয়ে গ্রহণ করা যায় না। ডসন (Dowson) ও কানিংহাম (Cunningham) মনে করেন ভারতীয় পুরোহিতেরা চিত্রলিপি থেকে ক্রমে ক্রমে ব্রাহ্মী লিপি রচনা করে। ব্রাহ্মী লিপির ভারতীয় উৎসের সমর্থনে বলিষ্ঠ তথ্য-প্রমাণ না থাকায় উপযুক্ত মতগুলি গ্রহণ করা যায় না।
যাঁদের মতে বিদেশি উৎস থেকে ব্রাহ্মী লিপির জন্ম তারা এ বিষয়ে একমত যে, সেই উৎসটি হল সেমীয় লিপি। কিন্তু সেমীয় লিপির কোন ধারা বা উপধারা থেকে ব্রাহ্মীর জন্ম সে-বিষয়ে মতভেদ আছে। আমরা জানি, সেমীয়-হামীয় ভাষাবংশের একটি শাখা হল সেমীয় শাখা। এই শাখার দুটি উপশাখা হল—পূর্বী ও পশ্চিমা। পূর্বী উপশাখার ভাষাগুলি বাণমুখ লিপিতে লেখা হত। পশ্চিমা উপশাখার দুটি ভাগ—উত্তরা ও দক্ষিণী। উত্তরা গোষ্ঠীর ভাষা ছিল কাননীয় (Canaanite), ফিনীসীয় (Penician) ও আরামীয় (Aramaic)। এই উত্তরা গোষ্ঠীর সেমীয় ভাষাভাষীরা মিশরীয়দের কাছ থেকে লিপিবিদ্যা গ্রহণ করে মিশরীয় চিত্রপ্রতীকে (Hieroglyph) ব্যবহৃত অক্ষরলিপি (Syllabic Script) থেকে বর্ণলিপি (Alphabetic Script) গড়ে তোলে। এই বর্ণলিপির দুটি প্রধান ধারা—ফিনীসীয় ও আরামীয়। ব্রাহ্মী লিপির বিদেশীয় উৎস সম্পর্কে যে দুটি মত দেখা যায় তাতে একটির সিদ্ধান্ত হল ব্রাহ্মী লিপি, ফিনীসীয় লিপি থেকে জাত। অন্যটির সিদ্ধান্ত হল ব্রাহ্মী লিপি আরামীয় লিপি থেকে জাত।
ব্রাহ্মী লিপির বর্ণগুলির সঙ্গে ফিনীসীয় লিপির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, বর্ণের সাদৃশ্য দেখে ব্যুলার (Bihler), ভেবর (Waber), উইলিয়াম জোন্স (William Jones) প্রমুখ মনীষীরা সিদ্ধান্ত করেন ব্রাহ্মী লিপি ফিনীসীয় লিপি থেকে জন্মলাভ করেছে। কিন্তু আধুনিক লিপি বিশেষজ্ঞ ডেভিড ডিরিঙ্গার (David Diringer) মনে করেন ব্রাহ্মী লিপির জন্ম ফিনীসীয় লিপি থেকে নয়, আরামীয় লিপি থেকে। কারণ ব্রাহ্মী লিপির যখন জন্ম হয় (আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব অষ্টম-সপ্তম শতাব্দী), তখন ভূমধ্যসাগরের (Mediterranean) পূর্ব উপকূলের অধিবাসীদের সঙ্গে ভারতীয়দের কোনো প্রত্যক্ষ যোগাযোগই ছিল না। ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকুলের অধিবাসী গ্রীকেরা—যারা ফিনীসীয় লিপি গ্রহণ করেছিলেন—অনেক পরে আলেকজাণ্ডারের সময়ে (খ্রিঃ পূঃ ৩২৭-২৮) ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। ডিরিঙ্গারের এই যুক্তি অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং তার সিদ্ধান্তই গ্রহণীয়—আরামীয় লিপি থেকেই ব্রাহ্মী লিপির জন্ম। আরামীয় (Aramaic) লিপি থেকে ভারতের আদি লিপি ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী দু’য়েরই জন্ম। এই দুই লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায় অশোকের অনুশাসনে (খ্রিঃ পূঃ ৩য় শতাব্দী)। ব্রাহ্মী লেখা হত মূলত বাম থেকে ডান দিকে, যদিও ডান থেকে বাম দিকে লেখা ব্রাহ্মীরও নিদর্শন পাওয়া যায়। আর খরোষ্ঠী লেখা হত শুধুই ডান থেকে বাম দিকে। খরোষ্ঠী ব্যবহৃত হত সেমিটিক্ ভাষা (আরবি প্রভৃতি) লেখার জন্যে এবং তা থেকে আধুনিক উর্দু ভাষার লিপির জন্ম। আর ব্রাহ্মী ব্যবহৃত হত অ-সেমিটিক ভাষা (সংস্কৃত, প্রাকৃত প্রভৃতি) লেখার জন্যে এবং তা থেকে আধুনিক নাগরী, বাংলা প্রভৃতি অধিকাংশ ভারতীয় লিপির জন্ম।
ব্রাহ্মী লিপির প্রসারের ফলে এর নানা আঞ্চলিক রূপ গড়ে উঠেছিল। খ্রীস্টীয় প্রথমদ্বিতীয় শতাব্দীতে ব্রাহ্মী লিপির তিনটি প্রধান আঞ্চলিক রূপ পাই—উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় ও বহির্ভারতীয়। ক্রমবিকাশের নানা স্তরের মাধ্যমে উত্তর ভারতীয় লিপি থেকে বাংলা, নাগরী প্রভৃতি, দক্ষিণ ভারতীয় লিপি থেকে তামিল, তেলুগু প্রভৃতি এবং বহির্ভারতীয় লিপি থেকে তিব্বতী, বর্মী, শ্যামদেশীয়, যবদ্বীপী প্রভৃতি লিপির জন্ম হয়েছে।
ব্রাহ্মী লিপি থেকে যে উত্তর ভারতীয় লিপিটি গড়ে উঠেছিল তা পূর্ণ বিকশিত বিশিষ্ট রূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতাব্দীতে অর্থাৎ গুপ্তযুগে। এই জন্যে তখনকার উত্তর ভারতীয় লিপিকে ‘গুপ্তলিপি’ বলা হয়। এই গুপ্তলিপি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়—পূর্ব ও পশ্চিমা। এই পূর্বী ধারাটি আবার দু’টি উপধারায় বিভক্ত হয়ে যায়—পূর্ব ও পশ্চিমা। গুপ্তলিপির পূর্বী ধারার পশ্চিমা উপধারা থেকে খ্রীস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে ‘সিদ্ধমাতৃকা’ লিপির জন্য হয়। এই সিদ্ধমাতৃকা লিপির একটি জটিলতর রূপ খ্রীস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে গড়ে উঠে; তার নাম হয় কুটিল লিপি। ড. সুকুমার সেন সিদ্ধান্ত করেছেন—“এই কুটিল লিপি হইতে বাঙ্গালা লিপির উদ্ভব।” এই কুটিল লিপি থেকে ভারতের বহু-প্রচলিত ‘নাগরী’ বা ‘দেবনাগরী’ লিপিরও বিকাশ হয়। খ্রীস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতাব্দী থেকে নাগরী লিপিতে লিখিত প্রত্নলেখ পাওয়া যাচ্ছে। একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে নাগরী লিপি প্রায় পূর্ণ বিকশিত আধুনিক রূপ লাভ করে। এই লিপি এখন সংস্কৃত, হিন্দি, নেপালি, মারাঠি প্রভৃতি ভাষায় ব্যবহৃত হয়। বাংলা লিপির উৎস সম্পর্কে দু’টি মত প্রচলিত আছে। নাগরী লিপির দুটি প্রকারভেদ গড়ে উঠেছিল—পূর্ব-ভারতীয় ও পশ্চিম-ভারতীয়। বুলারের । (Bihler) মতে এর পূর্ব-ভারতীয় রূপটি থেকেই প্রত্নবাংলা লিপি (Proto Bengali Script) খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে গড়ে উঠে। অন্য দিকে এস.এন চক্রবর্তীর মতে—প্রস্তরে খোদিত উত্তর ভারতীয় লিপির দু’টি শাখা ছিল—পূর্বী এবং পশ্চিমা। পশ্চিমা শাখাটি থেকে সিদ্ধমাতৃকা লিপির জন্ম হয়। আর পূর্বী শাখাটি থেকে স্বতন্ত্র ধারায় প্রত্ন বাংলা লিপির জন্ম হয় খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীতেই। আমাদের মনে হয় সিদ্ধমাতৃকা লিপির যে জটিলতর রূপ কুটিল লিপি তা থেকে দুই স্বতন্ত্র ধারায় প্রায় সমান্তরালভাবে নাগরী ও বাংলা লিপির বিকাশ হয়েছিল, নাগরী লিপি থেকে বাংলা লিপির জন্ম হয়নি। অবশ্য নাগরী লিপির কিছু প্রভাব প্রত্ন বাংলা লিপির উপরে পড়েছিল।
যাই হোক, প্রত্ন বাংলা লিপির নিজস্ব রূপটি খ্রিস্টীয় নবম-দশম শতাব্দীতেই গড়ে উঠেছিল। এই প্রত্নবাংলা লিপির প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় নারায়ণ পালের তাম্রশাসনে (খ্রিঃ নবম শতাব্দী) এবং মহীপালের বাণগড় দানলিপিতে (আনুমানিক ৯৭৫-১০২৬ খ্রিঃ)। খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীর বিজয় সেনের দেবপাড়া লিপিতে এবং তারপরে লক্ষ্মণ সেনের তর্পণ-দীঘি লিপিতে একাদশ দ্বাদশ শতাব্দীর বাংলা লিপির বিবর্তনের চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়। সেন-যুগে চ, ছ, ঝ, ট, ণ, হ প্রভৃতি কয়েকটি অক্ষর বাদে বাকিগুলি সুগঠিত রূপ লাভ করে। ঢাকায় দ্বাদশ শতকের একটি প্রাচীন মূর্তি পাওয়া গেছে। এই মূর্তিতে যে বাংলা অক্ষর পাওয়া গেছে বিশেষজ্ঞদের মতে তাতে বাংলা অক্ষরের পূর্ণ আকার প্রথম প্রত্যক্ষ করা গেল। বাংলা লিপি যে এই সময়ে বেশ প্রতিষ্ঠিত ছিল তার প্রমাণ বহির্বঙ্গেও তার নিদর্শন পাওয়া গেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত রচয়িতা ড. অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় উল্লেখ করেছেন জাপানের কোনো মন্দিরে খ্রিস্টীয় দশম-একাদশ শতাব্দীতে বাংলা অক্ষরে লিখিত গ্রন্থ রক্ষিত আছে এবং যবদ্বীপে খ্রিঃ দ্বাদশ শতাব্দীতে বাংলা অক্ষরে লিখিত প্রত্নলিপি পাওয়া গেছে। বাংলা লিপির যেসব প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় তাতে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ যথার্থই সিদ্ধান্ত করেছেন বাংলা লিপি নাগরী লিপি থেকে জন্মলাভ করেনি, বাংলা লিপি নাগরী লিপির সঙ্গে সমান্তরাল স্বতন্ত্র ধারায় বিকাশলাভ করেছিল।
Leave a Reply