কবি সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী নিরালার কৃতিত্ব আলোচনা কর।
কবি সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী নিরালা
কবি সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী নিরালার (১৮৯৯-১৯৬১) কাব্য সাধনা ছিল বিচিত্র ও বহুমুখী। এক কবি আত্মার অন্তঃসঙ্গীত শোনা যায় তাঁর কাব্যে। দীর্ঘকবিতা, ছোট কবিতা, গান, রাষ্ট্রীয় প্রবণাত্মক কবিতা প্রভৃতি নানা ধারায় প্রবাহিত হয়েছে তার কাব্যরচনার সৃষ্টিস্রোত। তিনি একদিকে ছায়াবাদী অন্যদিকে প্রগতিবাদী, একদিকে উপাসক অন্যদিকে তীব্র অন্তর্প্রেরণার গীতোচ্ছ্বাসের পথবাহী। কবিতা তাঁর কাছে মুক্তির অন্য নাম। নিরালার কাব্যসাধনার অন্য নাম তাঁর কবিতাত্মার মুক্তিসাধনা।
১৯২০ থেকে ১৯৬০-৬১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘসময় নিরালার ১৩টি কাব্যসংগ্রহ প্রকাশিত হয়— অনামিকা, ১ম (১৯২৩), পরিমল (১৯২৯), গীতিকা (১৯৩৬), অনামিকা, ২য় (১৯৩৯), তুলসীদাস (১৯৪২), কুকুরমুত্তা (১৯৪২), অনিমা (১৯৪৩), বেলা (১৯৪৬), নয়ে পত্তে (১৯৪৬), অর্চনা (১৯৫০), আরাধনা (১৯৫৩), গীতগুঞ্জ (১৯৫৪), সান্ধ্য ও কাকলী (১৯৬৯)।
প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল ব্যাপী কাব্যসাধনায় নিরালা যে কাব্য রচনা করেছিলেন তা ভারতীয় সাহিত্যের স্থায়ী সম্পদ। বিশেষত রাজনৈতিক সামাজিক ও আর্থিক পরিস্থিতিকে তিনি যেভাবে দেখেছেন এবং অনুভব করেছেন, তা তাঁর কবিভাবনার আলোয় কাব্যরূপ লাভ করেছে।
নিরালার জীবন ও কাব্যসাধনা সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে কবি নিরন্তর এক আর্থ-সামাজিক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে হেঁটে গিয়েছেন। তার সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত ছিল সামাজিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের নিরন্তর ও ক্রমবর্ধমান চাপ। তাই নিরালার কাব্যে তার প্রতিক্রিয়া ভাষারূপ লাভ করেছে।
নিরালার কাব্য সাধনার প্রকৃতি বুঝতে হলে প্রথমেই তাকাতে হবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনচর্যার দিকে। এক অত্যন্ত অস্থিরমতি মানুষ যিনি সামাজিক পরিস্থিতির সাথে সবসময় মানিয়ে চলতে পারেননি। অর্থনৈতিক অস্বাচ্ছন্দ্য নিরন্তর তাঁর মনে এক অস্থিরতার ভাব এনে দিয়েছে। পারিবারিক বিপর্যয়, পত্নী ও কন্যার অকাল মৃত্যু, সেই অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অনেক সময়ই যন্ত্রণাময় জীবন তাঁকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়। জীবন তার কাছে হয়ে ওঠে মৃত্যু-বিবর—
মৈ রহুঁগা না গৃহ কা ভীতর
জীবন মেরে মৃত্যু কা বিবর।
অর্থাৎ
আমি রইব না কো ঘরের ভিতর
জীবন আমার মৃত্যু বিবর।
এই রকম বোধ কবি মনে যতই প্রখর হয়ে উঠেছে, কবির ভাষা-ভঙ্গি কাব্যশৈলীও ততই তীক্ষ্ণ ও স্ফুটতর হয়েছে। এই জীবনবোধই কবিকে তাঁর নিজস্ব ভাষা সন্ধানে লিপ্ত রেখেছে। দুঃখবোধ তার কবিতায় বিচিত্র ভাষা রূপ লাভ করেছে। জীবনের ভাষ্য রচনা করেন কবি কখনও ব্যঙ্গের তীক্ষ শর সন্ধান করেন, কখনও গেয়ে ওঠেন বেদনার গান কখন আবার প্রকৃতিচেতনায়-মগ্ন থাকেন। জীবনের রুক্ষ্মতা তাকে যতই শূন্য করে কবি ততই সৃষ্টিশীল হয়ে ওঠেন—
বাহর ম্যায় কর দিয়া গয়া হুঁ
ভীতর পর, ভর দিয়া গয়া হুঁ।
অর্থাৎ
বাইরে যতই হয়েছি শূন্য।
ভিতরে ততই হয়েছি পূর্ণ।
এইভাবে কবি নিজের জীবনের দুঃখমোচনে শিল্পের রঙে নতুন আভা দান করেছেন। নিরালার কাব্য সাধনায় তারই শিল্পময় পরিণতি ঘটেছে।
ছায়াবাদ ও নিরালার কবিতা
কবি নিরালা ছিলেন ছায়াবাদী কাব্যান্দোলনের কবি। নিরালা যখন কবিতা রচনা শুরু করেন তখন অন্যান্য কাব্য প্রবৃত্তির সঙ্গে ছায়াবাদী কবিতারও সূচনা ঘটে। আচার্য রামচন্দ্র শুক্ল তাঁর সুবিখ্যাত ‘হিন্দি সাহিত্য কা ইতিহাস’ গ্রন্থে ছায়াবাদকে নতুন ধারার কাব্যের তৃতীয় উত্থানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। প্রথম উত্থানের অন্তর্ভুক্ত কবিরা হলেন ভারতেন্দু হরিশ্চন্দ্র ও তার সমসাময়িক কবিরা। দ্বিতীয় উত্থানের অন্তর্ভুক্ত কবিরা হলেন অযোধ্যা সিং উপাধ্যায়, মহাবীর প্রসাদ দ্বিবেদী, মৈথিলীশরণ গুপ্ত প্রমুখ কবি। তৃতীয় উত্থানের অন্তর্ভুক্ত হলেন জয়শঙ্কর প্রসাদ, সুমিত্রা নন্দন পন্থ ও নিরালা প্রমুখ কবি।
আচার্য শুক্ল ছায়াবাদের প্রধান দুটি অর্থের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রথমটি হল রহস্যময়তা বা রহস্যময় আধ্যাত্মিকতা এবং দ্বিতীয়টি হল প্রতীকময়তা বা প্রতীকবাদ। শুক্লর মতে মহাদেবী বর্মাকে প্রথম অর্থে ছায়াবাদী এবং নিরালাকে দ্বিতীয় অর্থে ছায়াবাদী বলা চলে। উনিশ শতকের শেষদিকে বাংলায় যে সব আধ্যাত্মিক ব্রাহ্মসঙ্গীত রচিত। হয়েছিল তার মধ্যে আধ্যাত্মিক রহস্যের ছায়া ছিল। হিন্দি কাব্যে এই শব্দটি প্রথমে আধ্যাত্মিক রহস্যবাদ ও পরে রূপকাত্মক কাব্য ভাষা নির্মাণের অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। এই জন্য আচার্য শুক্ল ছায়াবাদকে প্রতীকবাদ বা চিত্রভাষাবাদ বলতে চেয়েছেন।
নিরালার কবিতায় যে আধ্যাত্মিক দৃষ্টির প্রকাশ দেখা যায় তা কোনো মধ্যযুগীয় সন্ত কবির নয়। বরং তা হল একজন ছায়াবাদী কবির। কেননা ইহজগৎ ও মানবিক দুর্বলতাকে অস্বীকার না করে তাকেই তিনি গৌরবদান করেন। নিরালার কবিতায় আছে—
হে নশ্বর য়হ দীন ভাব
কায়রতা, কামপরতা
ব্রহ্ম-হো তুম:
অনুবাদ
হে নশ্বর, হে দীন ভাব
ভীরুতা, কামপরায়ণতা
তুমি ব্রহ্ম
প্রথম থেকেই নিরালার কবিতায় একটা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছিল। প্রথম জীবনে কলকাতায় রামকৃষ্ণ মিশনে ‘সমন্বয়’ পত্রিকায় লেখার সময় তার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠতে থাকে। মহাদেবপ্রসাদের ‘মতমালা’ (১৯২৩) পত্রিকায় লেখার সময় তিনি যখন ‘নিরালা’ নাম গ্রহণ করেন তখন এই মনোজগৎ আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। তার প্রথম কাব্য সংকলন ‘অনামিকা’র (১৯২৩) ‘পঞ্চবটী প্রসঙ্গ’, ‘অধিবাস’, ‘জুহীকী কী কলী’ প্রভৃতি কবিতায় ছায়াবাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।
নিরালার কবিতায় প্রকৃতি বর্ণনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বাদলরাগ কবিতাটি তাঁর প্রকৃতি বর্ণনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ধ্বনি ব্যঞ্জনার সঙ্গে অর্থ বিস্তার এই কবিতার বৈশিষ্ট। অমর রাগের গায়ক বাদলকে আহ্বান করে কবি যে কবিতা লিখেছেন তাতে ছায়াবাদী কবির মুক্তিকামী প্রাণের সুর শোনা যায়। কবিতাটির লয় ধ্বনি ও ব্যঞ্জনা লক্ষ করার মত। বাদলকে আহ্বান করে কবি লেখেন—
ঝুম ঝুম মৃদু গরজ-গর ঘনঘোর।
রাগ অমর। অম্বর মে ভর নিজ শোর
ঝর ঝর ঝর নির্জর-গিরি সর মেঁ,
অনুবাদ
ঝুম ঝুম মৃদু গরজ গরজ ঘন ঘোর
রাগ অমর। তাম্বর মাঝে ভর নিজ স্বর
ঝর ঝর ঝর নির্জর গিরি সরোবরে
শ্রুতিধর্মিতা এই কবিতার বৈশিষ্ট্য। আকাশে মেঘের স্বর শুনে কবি তাকে ধ্বনিময় রূপদান করেন। এই ধ্বনিময়তাকে কবি নতুন ভাববন্ধনে সংযুক্ত করেন।
ছায়াবাদী কবি প্রকৃতির ওপর পরোক্ষ সত্তা আরোপ করেন। নিরালার প্রকৃতি বিষয়ক কবিতায় বিশুদ্ধ প্রকৃতি বর্ণনা অপেক্ষা অন্যতর সত্যের ব্যঞ্জনা রয়েছে। নিরালার কবিতায় প্রকৃতির প্রতীকাত্মক বর্ণনার পরিচয় পাওয়া যায়। ‘পরিমল’ সংগ্রহের একটি কবিতায় প্রকৃতির এই প্রতীকী রূপের পরিচয় আছে বসন্তের বর্ণনায়—
ভর রেণু-রেণু নভ কী,
ফৈলা দো জগ কী আশা
খুল যায়ে খিলী কলিয়োঁ মে।
নব-নব জীবন কী ভাষা
অনুবাদ
ভর রেণু রেণু নভ তলে
ভরাও পৃথিবী আশার ফলে
ভরুক যত ফুলের আশা
নব নব জীবনের ভাষা।
ছায়াবাদী কবি প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ। ছায়াবাদী রূপে নিরালাও। তবে প্রকৃতির মধুর ও উগ্র রূপের বর্ণনায় কবি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখেন।
অনেক ছোট ছাোট কবিতা রচনা করেছিলেন নিরালা। দীর্ঘ কবিতাগুলোর মত এইসব ছোট কবিতাতেও নিরালার কবিসত্তার পরিচয় রয়েছে। ‘অচর্না’ সংগ্রহে একটি ছোট কবিতায় কবি লিখেছেন—
জৈসে মৈঁ বাজার মেঁ বিকা।
কৌড়ী মৌল: পূর্ণশূণ্য দিখা।
অনুবাদ
যেন বাজারে দিয়েছি বিকিয়ে
হাজার হাজার মাল শূন্য শূন্য মিলিয়ে
বেশ বোঝা যায় যে কবি জীবনে যে দুঃখ পেয়েছেন তার মূল্যে তার কাব্যসৃষ্টির অঙ্গন ভরিয়ে তুলেছেন। কবি দুঃখবাদী নন, দুঃখ দিয়ে গড়া তাঁর কবিতার স্বর।
প্রগতিবাদ ও নিরালার কবিতা
নিরালার কবিতায় ছায়াবাদী বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি প্রগতিবাদী চিন্তা নিরালার কবিতায় ভাষা পেয়েছে, তাই নিজের বক্তব্যকে খুব স্পষ্টভাবে কবি প্রকাশ করেন—‘অনামিকা’ কাব্যে কবি লেখেন—
বহুত দিনোঁ বাদ খুলা আসমান।
নিকলী হৈ ধুপ হুয়া খুশ জহান।
এই ভাষা সরল ও সহজবোধ্য। ছায়াবাদী কবি নিরালা ইতিপূর্বে যে প্রকৃতি বর্ণনাত্মক কবিতা লিখেছেন তার সঙ্গে এই কবিতার ভাষা মেলে না। বস্তুত ছায়াবাদী কবিতা আন্দোলনের উত্তরার্ধে কবিদের ভাষায় সরলতার ছোঁয়া লেগেছিল, ভাষার সূক্ষ্ম প্রয়োগ অপেক্ষা সরল ভাষা প্রয়োগে তাদের আগ্রহ দেখা যায়।
১৯৩৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘প্রগতিশীল লেখকসংঘ’। কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই ভারতীয় সাহিত্যে প্রগতিশীলতার লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছিল। সাম্যবাদী চিন্তার স্ফূরণ বিংশ শতকের গোড়া থেকেই অনেক ভারতীয় কবির রচনায় দেখা গিয়েছিল, ছায়াবাদী কবিদের মধ্যেও সাম্যবাদী চিন্তার স্পর্শ লেগেছিল। বিশেষত সুমিত্রানন্দন পন্ত বা নিরালার মত কবির রচনায়।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত ‘পরিমল’ কাব্য সংকলনে নিরালার প্রগতিবাদী চিন্তাসূচক কয়েকটি কবিতা ছিল। ‘বাদল রাগ’, ‘ভিক্ষুক’, ‘বিধবা’ প্রভৃতি কবিতায় কবি দীনহীন শোষিত পীড়িত মানবের প্রতি সহানুভূতি দেখান এবং পরিবর্তন কামনায় উদ্দীপক কবিতা লেখেন। ক্রমে ‘কুকুরমুত্তা’ (১৯৪৮), ‘নয়ে পত্তে’ (১৯৪৯), ‘বেলা’ (১৯৪৯)। ‘কুকুরমুত্তা’য় পুঁজিবাদী সমাজের প্রতি কবির ব্যঙ্গের মনোভাব ফুটেছে।
নিরালা জীবনবাদী কবি, কখনও তিনি বিষাদ খিন্ন কণ্ঠে গান গেয়ে ওঠেন। তিনি দুঃখবাদী নন, কিন্তু দুঃখকে অস্বীকারও করেননি। জীবনের স্বাভাবিকতাকে তিনি মেনে নেন—
অভী ন হোগী মেরা অন্ত
অভী অভী তো আয়া হৈ
মেরে বন মেঁ মৃদুল বসন্ত।
তাই কবি গেয়ে ওঠেন—
জীবন কী তরী খোল দে রে
জল কী উত্তাল তরঙ্গ পর।
নিরালা প্রতিবাদী, বিদ্রোহী কবি। তাঁর জীবনীকার রামবিলাস শর্মা তাঁকে বলেছেন ক্রান্তিকারী কবি। পরাধীন রাষ্ট্রে স্বাধীনতার চেতনাও তাঁর কাব্যে অস্ফুট থাকেনি। ‘মহারাজ শিবাজী কা পত্র’ কবিতায় পরাধীন রাষ্ট্রে মানুষের মনের কথাটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে ফুটে ওঠে—
হৈঁ জো বহাদুর সমর কে
ওয়ে মর কে ভী
মাতা কো বচায়েঙ্গে
শত্রুওঁ কে খুন সে।
এই কবিতাংশ ১৯৩০-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে অনুধাবন করা প্রয়োজন। নিরালার রাষ্ট্রচেতনার স্বরূপ এখানে ধরা পড়েছে।
নিরালার কবিতায় ভক্তিভাব তথা প্রার্থনা ভাষা কাব্যরূপ লাভ করেছে। কবিতা বিষয়ে কবির প্রার্থনা এইরকম—
সবিতে কবিতা কো ইয়হ বর দো
হৃদয় নিকেতন স্বরময় কর দো।
এক দিবস কে জীবন মেঁ জয়
জরা-মরণ-ক্ষয় হো নিঃসংশয়।
আগে করুণা অক্ষ অপশ্চয়
কাল এক কো সুকরাকর হে।
এই প্রার্থনায় কবি জীবনকেই স্মরণ করেছেন। এই প্রার্থনা জীবনবাদী কবি নিরালার গভীর হৃদয় নিঃসৃত।
নিরালার কাব্য-প্রতিভার বৈশিষ্ট্য
নিরালার কবিতার যেসব বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল তা সূত্রাকারে এইরকম—
- নিরালা ছায়াবাদী কবিদের অগ্রগণ্য
- নিরালার কবিতায় ছায়াবাদী কবিমন ও কাব্যশৈলী ধরা পড়েছে—
- ক. প্রকৃতি বর্ণনামূলক দীর্ঘ কবিতায়;
- খ. শৃঙ্গারাত্মক দীর্ঘ ও ছোট কবিতায়;
- গ. খড়িবলী ভাষার বর্ণময় ও সূক্ষ্ম প্রয়োগে;
- ঘ. কবিতা সৃষ্টির বিচিত্র বৈভবে;
- ঙ. ছায়াবাদী কাব্যশৈলীর বর্ণময় বিস্তারে।
- নিরালা প্রগতিশীল কবি এবং প্রগতিবাদ তাঁর কবিতায় নানা ভাষারূপ পেয়েছে। যথা—
- ক. বঞ্চিত ও দুর্বলতর মানুষের মুখে ভাষাপ্রদানে;
- খ. সমাজে সাম্যপ্রতিষ্ঠার স্বপ্নকামনার কাব্যরূপদানে;
- গ. সমাজ পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায়;
- ঘ. ‘বাদল রাগ’ প্রভৃতি প্রকৃতিমূলক কবিতা রচনায়;
- ঙ. ‘কুকুরমুত্তা’র মত ব্যঙ্গাত্মক কবিতা রচনায়;
- চ. ‘মস্কো ডায়লগ’ ‘গরম পকৌড়া’ ইত্যাদি ব্যঙ্গাত্মক কাব্য চিত্র অঙ্কনে;
- নিরালা বিদ্রোহী কবি। এই বিদ্রোহের সুর তাঁর কবিতায় নানাভাবে শোনা যায়।
- নিরালা সাম্যবাদী এবং সামাজিক বৈষম্যের নিপুণ চিত্র অঙ্কনে তিনি সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার কামনা করেছেন।
- নিরালা স্বাধীনতাকামী কবি এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মহারাজ ‘শিবাজী কা পত্র’-এর মত কবিতায় সুস্পষ্ট হয়েছে।
- নিরালা শুধু মাত্র প্রকৃতি মুগ্ধ কবি নন, তাই প্রকৃতি বর্ণনার মধ্যে কখনও প্রকাশ পায় প্রতীকী বর্ণনার ছায়াবাদী মনোভাব (যথা, জুহী কী কলী)। আবার কখনও বা প্রকৃতি বর্ণনায় তাঁর প্রগতিশীল কবিমন সাড়া দেয় (যথা বাদল রাগ)।
- নিরালা গীতিকবি। তাই প্রেম, বিরহ, প্রার্থনা, দুঃখ সন্তাপ, প্রভৃতি বিচিত্র ভাব ও ভাবনা তাঁর গীতিকা’, ‘গীতগুঞ্জ’ প্রভৃতি রচনায় ফুটে উঠেছে।
- নিরালার কাব্য সাধনার সঙ্গে বাংলা তথা অন্য ভারতীয় কবিতার প্রাণের বন্ধন রয়েছে যথা—
- ক. কৃত্তিবাসী রামায়ণ থেকে ‘রাম কা শক্তিপূজা’ কবিতার উপাদান গৃহীত হলেও নিরালার নিজস্বতা ও প্রতিভার ছটায় তা উজ্জ্বল।
- খ. রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নিরালার বহুবর্ণবিস্তারী পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও কবি রবীন্দ্রের সানুভব অনুগমনে নিরালা শতধা বিকশিত। নিরালার রবীন্দ্র বিরোধিতা (যথা ‘দুই পাখি’ কবিতা বিষয়ে নিরালার বক্তব্য) এবং রবীন্দ্র বরণ (রবীন্দ্রকবিতার অনুবাদ ও অনুধ্যান) তার প্রমাণ।
- নিরালার কবিতায় লোকাভরণ শৈলীর প্রয়োগ দেখা যায়, লোক উপাদানের শিল্প প্রয়োগে কবি এই শৈলী নির্মাণ করেছেন।
Leave a Reply